• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০৪:৫৫ পিএম

১৪ বছরেও সম্পন্ন হয়নি বিচার

আজ ভয়াল ‘বৈদ্যের বাজার ট্রাজেডি’

আজ ভয়াল ‘বৈদ্যের বাজার ট্রাজেডি’
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার


আজ রোববার (২৭ জানুয়ারি) ভয়াল সেই ‘বৈদ্যের বাজার ট্র্যাজেডি’।

এ দিনে দুর্বৃত্তদের ভয়ানক গ্রেনেড হামলায় নিহত হন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া। ওই হামলায় তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদাসহ প্রাণ হারান আরও ৪ জন। নিহত অন্যরা হলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। এ ঘটনায় আহত হন নেতাকর্মীসহ প্রায় শতাধিক সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ ১৪ বছরেও এর বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে নিহতদের পরিবারসহ সমগ্র  জেলাবাসীর মধ্যে।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া। সভা শেষে তিনি সহকর্মীদের নিয়ে বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইটে পৌঁছামাত্র একের পর এক অতর্কিত গ্রেনেড হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ক্ষত-বিক্ষত হন শাহ এ.এম.এস কিবরিয়াসহ অনেক নেতাকর্মী। স্থানীয় লোকজন কিবরিয়াসহ আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে। পরে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ঢাকা পৌঁছার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা জাতি, হরতাল-অবরোধে হবিগঞ্জ শহর কার্যত হয়ে পড়ে অচল।

ঘটনার পরদিন ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এমপি বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে কাজ করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু মামলাটির স্বাভাবিক তদন্ত না হয়ে দলীয় বিবেচনায় পরিচালিত হতে থাকে। সি.আই.ডি’র তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ২০ মার্চ তৎকালীন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ুমসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ১ম অভিযোগপত্র দাখিল করেন।  

অভিযোগপত্র দেয়ার পর মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান ২০০৬ সালের ৩ মে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে না-রাজি আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন খারিজ করলে ১৪ মে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরকারের প্রতি ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করেন। ওই রুলের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করেন। এরপর মামলাটির দায়িত্ব দেয়া হয় সি.আই.ডি’র সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন সাবেক স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ আরো ১৪ জনকে আসামি করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া চার্জশীটের উপর হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল আদালতে না-রাজি আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে তার বাইরেও আরও অনেকেই জড়িত রয়েছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার মূল নথি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে থাকায় বিচারক রাজিব কুমার বিশ্বাস উপ-নথির মাধ্যমে আবেদনটি সিলেটে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্রের না-রাজি আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার বণিক। তিনি সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩য় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন সি.আই.ডি সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র এ.এস.পি মেহেরুন নেছা পারুল। অভিযোগপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন মেয়র জি কে গউছসহ নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সাথে পূর্বের চার্জশীটভুক্ত ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আব্দুল করিম ও মরহুম আহছান উল্লাহকে চার্জশীট থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।

এদিকে, একই বছরের ৩ ডিসেম্বর মামলার শুনানিকালে অভিযোগপত্রে ত্রুটির কথা উল্লেখ করে সংশোধিত অভিযোগপত্র জমা দেয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ প্রেক্ষিতে ২১ ডিসেম্বর সংশোধিত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। একই সাথে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়া হয়। ২৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ৩৫ জনকে আসামি ও ১৭১ জনকে সাক্ষী করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেরুন নেছা পারুল।

কিবরিয়া হত্যা মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর কারাগারে রয়েছেন। এছাড়াও মুফতি হান্নানসহ অন্য মামলায় ৩ আসামির  ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সিসিক মেয়র আরিফ ও হবিগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন মেয়র জি কে গউছসহ জামিনে রয়েছেন ১২ জন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ অন্যান্যরা পলাতক।

সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি কিশোর কুমার কর জানান, মামলাটি বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলাটি বর্তমানে হবিগঞ্জ দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে বিচারাধীন। মামলার ১৭১ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। এছাড়াও আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।

টিএফ