• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২, ০৪:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২, ০৪:৪০ পিএম

মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ

মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ

পীর জুবায়ের, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জজুড়ে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে সুনামগঞ্জকে বদলে দেয়ার। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় চলছে একের পর এক প্রকল্পের কাজ। ইতোমধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু আছে বাস্তবায়নাধীন আর কিছু আছে শুরুর অপেক্ষায়। চলমান ও অপেক্ষমাণ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হলে গোটা সুনামগঞ্জ বদলে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

সুনামগঞ্জের উন্নয়নে গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওভার সড়ক প্রকল্প, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ সেতু, কৃষি ইন্সটিটিউট, তাহিরপুরের শাহ-আরেফিন অদ্বৈত সেতু, ছাতকের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ছাতক অঞ্চলে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম সুরমার নদীর ওপর দিয়ে সুরমা সেতু প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। জানা যায়, মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। উড়াল সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওরাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা ও পর্যটনের দ্বার উন্মোচিত হবে। সহজেই দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা সুনামগঞ্জে প্রবেশ করে হাওরের উড়াল সড়ক দিয়ে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকায় চলে যেতে পারবেন। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা হোটেল-মোটেল নির্মাণ, হাওরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা-স্পিডবোটসহ নানা জলযান তৈরি করবে। তাতে হাওরপাড়ের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তাছাড়া, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাজও রয়েছে চলমান। প্রায় অর্ধেক কাজ ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে। প্রায় ৩৫ একর জমির উপর এই প্রকল্পে ১১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর ভেতরে থাকবে খেলার মাঠ ও পুকুর। এই প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার বর্ধিত মেয়াদ থাকলেও করোনা মহামারীর জন্য তা বেড়ে হয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাদ-বাকি কাজও চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ ১২৬ কোটি টাকা। পুরো কাজ সম্পন্ন হলে এখানে থাকবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, অভ্যন্তরীণ সড়ক, শহীদ মিনার ও খেলার মাঠ, ২টি হল নিয়ে মোট ১১টি ভবন। ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম শুরু হলে এখান থেকে ৩টি সাবজেক্টে প্রতি বছর ৪০জন করে ১২০জন শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে পারবে। 

২০১৭ সালে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের বিল পাস হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৯-এর নভেম্বরে। তখন কাজ শেষের সম্ভাব্য মেয়াদকাল ছিল ২০২১ এর জুনে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকায় বর্তমানে এই প্রকল্পের সম্ভাব্য মেয়াদকাল বেড়ে হয়েছে ২০২২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। অপরদিকে, ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুরে কৃষি ইন্সটিটিউটে কাজও শীঘ্রই শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন। 

সূত্র জানায়, জায়গা অধিগ্রহণসহ কাজ শুরু হবে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে। এছাড়া, যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আর পিছিয়ে থাকবে না হাওরবেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার দক্ষিণে কুশিয়ারা নদীতে নির্মাণাধীন ‘রাণীগঞ্জ সেতু’ ও উত্তরে যাদুকাটা নদীতে নির্মাণাধীন ‘শাহ-আরেফিন অদ্বৈত মৈত্রী সেতু’ দুটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাইলফলক তৈরি করবে বলে মনে করছেন জেলাবাসী। জানা যায়, কুশিয়ারা নদীতে রাণীগঞ্জ সেতুটির কাজ ২০১৬ সালে শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৩৩ ফুট প্রস্থের এই সেতুতে অ্যাপ্রোচ, কালভার্টসহ ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। 

বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২০২১ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না হলেও খুব দ্রুত তা শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাণীগঞ্জ সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ৫৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় বাঁচবে। এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ ও বিকল্প যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই সেতুটির প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, যাদুকাটা নদীতে নির্মাণাধীন শাহ আরেফিন অদ্বৈত মৈত্রী সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। জানা যায়, ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। মহামারি করোনার কারণে কাজে বিলম্বিত হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে তা সম্পন্ন করা যায়নি। তবে খুব শীঘ্রই এই সেতুর কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, ছাতকের সুরমা নদীর উপরে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে সেতুটির কাজ ৯৫ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ২০১৬ সালে অসম্পূর্ণ সেতুর কাজ শেষ করতে ১১৩ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। পরবর্তীতে, আরও ২৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৪০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই উদ্বোধন হবে ছাতকের সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতু। স্থানীয়রা জানান, ছাতক-দোয়ারাবাজারকে যুক্ত করবে সেতুটি। দীর্ঘ ৫০ বছর পর দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হবে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে।

সুনামগঞ্জের উন্নয়ন বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকাকে উন্নয়নের জাতীয় ধারায় নিয়ে আসতে চান। হাওর এলাকার মানুষের প্রতি তার মমতা ও দরদ রয়েছে। আমি বেঁচে থাকলে সুনামগঞ্জের উন্নয়নের কোনো কমতি থাকবে না। আমার কাছে সব সমান। আমি বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে উন্নয়ন করছি না। 

তিনি আরও বলেন, হাওর এবং হাওর এলাকার মানুষ এক সময় নানা কারণে অবহেলিত ছিলেন। শেখ হাসিনা হাওরকে আলোয় এনেছেন। সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের কাজ চলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, জেলা সদরে রেল লাইন আসবে। হাওরের উপর দিয়ে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা সড়ক নির্মাণের একটি বিশাল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই সড়ক দেশের একটি দৃষ্টিনন্দন ও মনোরম সড়ক হবে। সুনামগঞ্জের উন্নয়নে দ্রুত প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে সুনামগঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। সুনামগঞ্জে আরও উন্নয়ন হবে।

জাগরণ/আরকে