• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২, ১১:৪২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২, ১১:৪২ এএম

শিকলবন্দী মাইন উদ্দিনের আড়াই বছর

শিকলবন্দী মাইন উদ্দিনের আড়াই বছর

আবদুল জলিল
ধুলোবালিমাখা শরীর। কোমরে লোহার শিকল। বেঁধে রাখা হয়েছে ঘরের পাশে একটি খুঁটির সঙ্গে। কথা বলতে পারে না। শুধু মায়াভরা দুটি চোখ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে থাকে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বেলছড়ি ইউপির অযোধ্যা মোড়ের বাসিন্দা চা দোকানী মো: আলম মিয়ার ৯ বছর বয়সী ছেলে মাইন উদ্দিন। তার কৈশোর কাটছে এভাবেই।

মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে অন্য শিশুদের মতো প্রাণোচ্ছল শৈশব-কৈশোর পায়নি মাইন উদ্দিন। দিনে গাছের সঙ্গে অথবা খুঁটিতে আর রাতের বেলা ঘরের চৌকির সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখা হয় তাকে। দিনের বেলা আলো ও প্রকৃতি দেখতে পায় বলে তেমন একটা পাগলামি করে না। তবে রাতের অন্ধকারে খুব পাগলামি বেড়ে যায় তার। আড়াই বছর ধরে এ অবস্থাতেই কাটে প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া ও প্রাত্যহিক কাজকর্ম।

জানা যায়, জন্মের ১৮ মাস বয়সে জ্বর হয় মাইন উদ্দিনের। বিভিন্ন কবিরাজের পানি পড়া, ঝাড়-ফুকে জ্বর সারলেও শরীরে তার খিঁচুনি বাধে। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করানো হয়।

এভাবেই চিকিৎসা চলে সাড়ে তিন বছরের মতো। ছেলে মাইন উদ্দিনের চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটে পরে পাঁচ সন্তানের জনক চা দোকানী মো: আলম মিয়ার।

তিনি জানান, চা দোকানের আয় দিয়েই চলে আমার ছেলের চিকিৎসা আর সাত সদস্যের পরিবারের ভরন পোষন। ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ ছাড়া আর কোন সরকারি সাহায্য পায়নি। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসায় সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেন এই অসহায় বাবা।

আলম মিয়া আরও বলেন, চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে শিশু মাইন উদ্দিন। অকারনেই প্রতিবেশী শিশুদের মারধর করে। প্রতিবেশীদের বাড়িঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর করে। আবার মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে হারিয়েও যায়। এরপরপরই মানসিক প্রতিবন্ধী সন্দেহে প্রতিবেশীদের পরামর্শে গত দুই বছরের বেশী সময় ধরে মাইন উদ্দিনকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন তারা। সবসময় হাউমাউ করে কিন্তু মুখ ফুটে কোন কথা বলতে পারেনা।

বেলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো: রহমত উল্লাহ জানান, ইতোমধ্যে শিশুটিকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতেও শিশুটির চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয় পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট ডা: পরাগ দে বলেন, অপচিকিৎসার কারনেই এমনটা হয়েছে। চিকিৎসায় শিশু মো: মাইন উদ্দন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এভাবে বেঁধে রাখা তার প্রতি অমানবিক আচরন। এজন্য তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃলা দেব বলেন, ইতোমধ্যে মাইন উদ্দিনের নামে সুবর্ণ কার্ড ও প্রতিবন্ধী ভাতা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তবে তার বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

জাগরণ/আরকে