• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২২, ০৩:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৫, ২০২২, ০৩:৫১ পিএম

কিশোরগঞ্জে ১০ মাসে অর্ধশতাধিক ধর্ষণ

কিশোরগঞ্জে ১০ মাসে অর্ধশতাধিক ধর্ষণ

তন্ময় আলমগীর
সাংস্কৃতিক শহর কিশোরগঞ্জ। প্রাচীনকাল থেকেই এ জনপদের মানুষ সুকুমার বৃত্তির ধারক-বাহক। দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে এ জেলার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে চর্চার অভাব ও প্রশাসনের অসহায়তায় এ শহর ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি থেকে। যার প্রভাব পরছে জেলার অসচেতন সমাজে। আর এ কারণেই বেড়ে যাচ্ছে বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন।

জেলায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৫৮ ধর্ষণ এবং ১৯৬ নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার তিন উপজেলা কিশোরগঞ্জ সদরে ৮, হোসেনপুরে ২ ও পাকুন্দিয়ায় ৩টি মিলিয়ে মোট ১৩ ধর্ষণ এবং কিশোরগঞ্জ সদরে ৩৮, হোসেনপুরে ২ ও পাকুন্দিয়ায় ১৬ মোট ৫৬ নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে।

এই তিন উপজেলার ৭ ইউনিয়নে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি মার্চ মাস পর্যন্ত ৯ মাসে মোট ১২২ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে ১৫৭ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। 

ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল, মারিয়া ও বিন্নাটি, পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ও সুখিয়া এবং হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ও পুমদী।

এই সাত ইউনিয়নের মধ্যে হোসেনপুরের পুমদী ইউনিয়নে বাল্যবিয়ের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। গত ৯ মাসে সেখানে ৩১ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ও ৩২ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া সদরের বিন্নাটি ইউনিয়নে ৩২ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ও ১৭ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

অন্য পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে সদরের যশোদলে ১৪ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ও ২৮ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে, হোসেনপুরের শাহেদলে ৯ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ও ২৬ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে, পাকুন্দিয়ার সুখিয়া ইউনিয়নে ১৩ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ও ২২ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে, চন্ডিপাশা ইউনিয়নে ৯ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ও ২২ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে এবং সদরের মারিয়া ইউনিয়নে ১৪ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ও ১০ বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

নানা কৌশলে এসব বাল্যবিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। অভিভাবকদের অসচেতনতা, আইন প্রয়োগের অভাব, কিছু অসাধু কাজী বয়সের সনদ যাচাই না করে শুধু হলফনামা দেখে বাল্যবিয়ের রেজিস্ট্রেশন করায় এসব বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবার ও সমাজে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার পপি-পার্ট কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানানো হয়।

সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পপি কর্তৃক বাস্তবায়িত নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ (একাত্ত) প্রকল্পের এক মতবিনিময় সভায় কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে এ ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এতে প্রকল্পের আওতাভুক্ত কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল, মারিয়া ও বিন্নাটি, পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ও সুখিয়া এবং হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ও পুমদী এই সাত ইউনিয়নের বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও পরিস্থিতির ওপর বিশদ আলোচনা করা হয়।

সভায় নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ (একাত্ত) প্রকল্পের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ ফরিদুল আলম মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে এই সাতটি ইউনিয়নের বাল্যবিয়ে এবং পারিবারিক সহিংসতা পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

মতবিনিময় সভায় প্রকল্পের সদর উপজেলার কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম, হোসেনপুর উপজেলার কর্মকর্তা সালমা পারভীন, পাকুন্দিয়া উপজেলা কর্মকর্তা শাহীন হায়দার প্রমুখ ছাড়াও জেলা পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জাগরণ/আরকে