• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২২, ১০:২৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৮, ২০২২, ১০:২৮ এএম

তরমুজের অজানা রোগে দুচিন্তায় কৃষক

তরমুজের অজানা রোগে দুচিন্তায় কৃষক

তুহিন রাজ, রাঙ্গাবালী
কৃষক বেল্লাল প্যাদা প্রতিবছরই তরমুজ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। এবছরও নিজের ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ১০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। প্রথমে বীজ থেকে গাছগুলো বেড়ে উঠলেও হঠাৎ করে তরমুজ গাছ কুকড়ে ও আগা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। গাছ বেড়ে না ওঠায় কি রোগ হয়েছে তাও সে বলতে পারছে না। কুকড়ে যাওযায় গাছে তরমুজ আসছে না। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। কৃষক বেল্লাল প্যাদার বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশন গ্রামে। 

এদিকে উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের কাজীর হাওলা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নাসির খানও এবছর নিজের এক একর ও অন্যের কাছ থেকে বর্গা এনে দুই একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। তারও একই অবস্থা হঠাৎ এক সপ্তাহ থেতে তরমুজ গাছ কোকড়া ধরে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে খেতে গিয়ে কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। মলিন মুখেই মাথায় দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন কাটছে তার। 

শুধু কৃষক বেল্লাল প্যাদা, নাসির খানই নয় রাঙ্গাবালী উপজেলায় অনেক তরমুজ চাষী এখন তরমুজ খেতের অজানা রোগের কারণে দুচিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। সরেজমিন গিয়ে তরমুজ চাষীদের সাথে কথা বললে তারা তাদের তরমুজ খেতের দুরবস্থার কথাই জানান । 

কৃষক বেল্লাল প্যাদা জানান, চৈত্রের খা খা রৌদ্দুর আর প্রচণ্ড তাপদাহ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তরমুজের চারা গাছে কীটনাশক দেন। আধমরা চারাগুলো যদি একবার সতেজ হয়ে ওঠে এমন আশা নিয়েই শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চলতি মৌসুমে ১০ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন সে, কিন্তু অজানা কোন এক রোগে আক্রান্ত তরমুজ চারাগুলোর কচিপাতা কুকরে গাছগুলো মরে যাচ্ছে । 

কৃষক নাসির খান তার তরমুজ খেতে বসে তরমুজ গাছের আগা দেখছেন। তিনি বলেন, তাদের এই অঞ্চল তরমুজ আবাদের জন্য উপযোগি। কৃষকরাও তরমুজ আবাদ করে ভালো লাভবান হয়েছেন। গত বছর তিনি এক একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। খেত থেকেই তরমুজ বিক্রি করেছিলেন আড়াই লক্ষ টাকা। এবছর তিনি নিজের এক একর ও অন্যের কাছ থেকে এক একর লিজ এনে দুই একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে তার মোট খরচ হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা।  

কৃষক নাসির বলেন, এবছর ভেবেছিলাম কমপক্ষে তিন লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করুম। কিন্তু খেতে যে রোগ লাগছে তা তারা জানেন না। এখন তরমুজ গাছগুলো কুকড়ে ধরেছে। আগা শক্ত হয়ে গেছে। এতে তরমুজ হইবে কিনা তা নিয়ে দুচিন্তায় আছেন তিনি।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাগের মধ্যে খেতে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি তারা কৃষি বিভাগকে জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে নানা পরামর্শ দিলেও তা কাজে আসছে না বলে জানান কৃষক। 

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, পটুয়াখালী কার্যালয় জানায়, এবছর মোট ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে রাঙ্গাবালীতে ৯ হাজার ৪৪৯ হেক্টর । 

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, তরমুজ খেতে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষনা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের একটি দল সরেজমিন তরমুজ খেত পরিদর্শন করেছেন।   

আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষনা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেকার মাহমুদ বলেন, রাঙ্গাবালী তরমুজ থেকে প্রথম যে বিষয়গুলো দেখেছি, তা হলো গাছের কান্ড ফেটে রস নির্গত হওয়া, কান্ড কালো হয়ে যাওয়া, গাছ ঢলে পড়া ইত্যাদি। আসলে এক জমিতে এক ফসল বার বার ফলালে রোগবালাই বেশি হয়। পোকা-মাকড়ের উপদ্রপ দেখা দেয়। শস্য আবর্তন করণে খেতে রোগ বালাই কম হবে বলে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কয়েকদিন ধরে তরমুজ থেকে পাতা কুকড়ে যাওয়ার রোগ দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ,কে,এম মহিউদ্দিন বলেন, আসলে আবহাওয়ার বিরুপ আচরনের কারনে, যেমন দিনে ও রাতে তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্যের কারণে রোগ ও পোকা মাকড়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সরেজমিন তরমুজ খেত পরিদর্শন করেছেন এই কর্মকর্ত।  

তিনি বলেন, জাব পোকা, থ্রিপস জাতীয় শোষক পোকা ও মাকড় জাতীয় পোকার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ কারনে  তরমুজ গাছের কচি পাতা কুকরে যাচ্ছে। জেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর তরমুজ খেতে এই রোড় দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত এলাকার কৃষকদের কীটনাশক ও মাকড়নাশক স্প্রে দিয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ সম্বলিত প্রচারপত্র বিতরন করা হচ্ছে। এছাড়াও খেতে যে তরমুজ গাছ আক্রান্ত হয়েছে, তা তুলে মাটিতে পুতে ফেলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে করে রোগ ছড়ানো হ্রাস পাবে বলে জানান তিনি। 

জাগরণ/আরকে