• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯, ০৬:১৯ পিএম

হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ

শিক্ষক সংকট চরমে, পাঠদান ব্যাহত

শিক্ষক সংকট চরমে, পাঠদান ব্যাহত
হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ভবন

 

শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে। ১০২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৫৫ জন শিক্ষক প্রয়োজন হলেও আছেন অধ্যক্ষসহ মাত্র ১৫ জন। এর মধ্যে একজনও অধ্যাপক নেই। পড়ানো মত ডিগ্রিধারী শিক্ষক মাত্র ৪ জন। যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে আবার ৭ জনই প্রেষণে। তাদের জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল থেকে এনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ওইসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটও। অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭ সালে জনবলের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তাবনা প্রেরণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অধ্যক্ষ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠিয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষকের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবু সুফিয়ান জানান, তাদের কোনো শিক্ষক সংকট নেই। ভালভাবেই পাঠদান চলছে। জনবলের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তাবনা প্রেরণের জন্য চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কোনো চিঠি তিনি পাননি। তবে একজন শিক্ষকের চাহিদা কিভাবে দিলেন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী জানান, মেডিকেল কলেজ চালু হয়েছে কিন্তু এখন শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা তো হতে পারে না। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আছে কিছু ডাক্তার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রেষণে দেয়ার জন্য। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে কয়েকজনকে দেয়া হয়েছে। তারা ক্লাস নিচ্ছেন। এটিওতো অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, প্রেষণে শিক্ষক দেয়ায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও কিছু সমস্যা হচ্ছে। যারা কর্মরত আছেন তাদের বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন ঐতিহাসিক নিউফিল্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবু জাহির এমপির দাবির প্রেক্ষিতে তিনি হবিগঞ্জে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা ও বাল্লা স্থলবন্দর আধুনিকায়ন করার ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পায়। একই সাথে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহমুদা আক্তার ২৪/(১০) স্মারকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পরও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেয়া যায়নি। পরে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবারও উদ্যোগ নেয়া হয়। অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছিল নির্মানাধীন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনকে। সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সুফিয়ানকে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ওই শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়নি। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরু হয়।

মেডিকেল কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০২। এদিকে ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের তৎকালীন উপ-সচিব শাহানারা ইয়াসমিন লিলি স্বাক্ষরিত একপত্রে জনবলের চাহিদা জানতে চাওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘‘বিদ্যমান অনুমোদিত জনবল কাঠামো অপ্রতুল বিবেচিত হলে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের পদ সৃজনের চেকলিস্ট অনুযায়ী প্রস্তাব প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’’

২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল অধ্যক্ষ ডা. মো. আবু সুফিয়ান চিঠির জবাব দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘এ মেডিকেল কলেজে বিদ্যমান অনুমোদিত জনবলের কোন পদ নেই। ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রেষণে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।’’ তবে ফিজিওলজি বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মেডিকেল কলেজের গেজেট অনুযায়ী ১০০জন শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন বিভাগে মোট ৫৫ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু কর্মরত আছেন অধ্যক্ষসহ মাত্র ১৫ জন। ৭ জনকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রেষণে (সংযুক্ত) আনা হয়েছে। এর মধ্যে সদর আধুনিক হাসপাতাল থেকে আনা হয়েছে ২ জন, সদর উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে ১ জন, চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে ১ জন, নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১ জন, বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১ জন ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ১ জনকে আনা হয়েছে।

এসএসএম