• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯, ০৪:৪০ পিএম

কৃষকের কারেন্ট জালে নির্বিচারে মরছে পাখি

কৃষকের কারেন্ট জালে নির্বিচারে মরছে পাখি

 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজি ক্ষেতে পাখির উপদ্রব ঠেকাতে কৃষকের পেতে রাখা কারেন্ট জালে আটকা পড়ে নির্বিচারে মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। কৃষকদের মধ্যেও পরিবেশবান্ধব এসব পাখি হত্যার বিষয় নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই। অথচ নিষিদ্ধ এ কারেন্ট জালের ব্যবহার ঠেকাতে কোন পদক্ষেপও লক্ষ্য করা যায়নি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর হাজার হাজার বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এরমধ্যে বেগুন ও টমেটোর ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পাখির উপদ্রব থাকায় কৃষকরা ফসলকে রক্ষা করতে নানা ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। ক্ষেতের মধ্যে খুঁটি পুতে তাতে বিভিন্ন রংয়ের ফিতা টানানো, টিনের ঢনঢনি বাজানো, কাকতারুয়া স্থাপনের মত পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনেকেই ব্যবহার করছেন। তবে বেশির ভাগ কৃষক কারেন্ট জাল দিয়ে ফসলের ক্ষেতকে পুরোপুরি ঢেকে দিয়েছেন। এতে করে ওই ক্ষেতে পোকা কিংবা সবজি খেতে আসা বক, শালিক, ঘুঘু, বাঁদুর, চড়ইসহ বিভিন্ন দেশীয় পাখি জালে আটকে মারা পড়ছে।

উজানচর ইউনিয়নের পূর্ব উজানচর হাবিল মন্ডলের পাড়ার কৃষক মো. কফিল শেখ জানান, তিনি ৬ বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু ক্ষেতে পাখি বসে বেগুনে ঠোকা দিয়ে অনেক বেগুন নষ্ট করে ফেলছে। এতে করে ঠোকানো বেগুন আর বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও পাখি ঠেকানো যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে কারেন্ট জাল দিয়েছি। 

নিষিদ্ধ এই জাল কিভাবে সংগ্রহ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কারেন্ট জাল কিনতে অনেক টাকা খরচ হয়। তাই জেলেদের কাছ থেকে পুরনো জাল কিনে সবজি ক্ষেত ঢেকে দিয়েছি। এতে বিঘা প্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
 


ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চর বালিয়াকান্দি গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, কিছু সবজি ক্ষেতে পাখি ক্ষতি করলেও অনেক ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসলের উপকার করে। তাই পাখি মারা পড়ার মত কারেন্ট জাল পদ্ধতি ব্যবহার করা ঠিক না। বিকল্প হিসেবে তিনি ক্ষেতের চারদিক ও মাঝ খান দিয়ে ঘন ঘন খুঁটি পুঁতে নানা রংয়ের পাতলা ফিতা টাঙ্গিয়ে দিয়ে পাখির উপদ্রব থেকে সবজি রক্ষা করা য়ায়। বাতাসে এ সকল ফিতায় সৃষ্ট ভন ভন শব্দে পাখি ভয় পেয়ে ক্ষেতে তেমন একটা বসে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মুহাম্মদ মোহায়মেন আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, পাখি প্রকৃতি ও কৃষকেরও বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অনেক বেশি। তারা যতটুকু না ফসলের ক্ষতি করে ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে থাকে। তাই পাখি তাড়াতে কারেন্ট জালের মত মৃত্যু ফাঁদ পাতা উচিৎ না। কারেন্ট জাল সবক্ষেত্রেই অবৈধ। গোয়ালন্দ নদী এলাকা হওয়ায় কৃষকরা জেলেদের কাছ থেকে সহজেই পুরনো কারেন্ট জাল সংগ্রহ করতে পারে। এতে কৃষকরা এই পদ্ধতিতে সবজি রক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং উপজেলার অনেক কৃষকই কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন বলে শুনেছি। খোঁজ নিয়ে তাদের সাথে কথা বলা হবে। ক্ষতিকর এ পদ্ধতি ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এরপরও যদি জাল ব্যবহার করতেই হয় তবে তা কারেন্ট জাল অবশ্যই না। বড় ফাঁকা ওয়ালা সুতার জাল ব্যবহার করলে তাতে পাখি আটকা পড়ে মারা পড়বে না।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়াত হায়াত শিপলু জানান, বিষয়টি নিয়ে কৃষি অফিসারের সাথে আলোচনা করে দেখবো। পাখি এবং ফসল দুটিই যাতে রক্ষা পায় সে বিষয় নজর দিতে হবে। এমন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে যাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আবার পরিবেশের ভারসাম্য ও রক্ষা পায়।

কেটি