রাজধানী ঢাকার ১৯টি সরকারি ডিসপেন্সারির (বহির্বিভাগ চিকিৎসা কেন্দ্র) অবস্থা একেবারেই বেহাল দশা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তার ভাষ্যমতে- এসবের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
ডিসপেন্সারিগুলোর বেহাল দশার কথা জাগরণের কাছে স্বীকার করেছেন ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. এহ্সানুল করিম। বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি অবগত রয়েছেন। তিনি জানান, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে কয়েকটি চিকিৎসা কেন্দ্র মেরামত করার পরিকল্পনার রয়েছে তাদের।
পুরাতন বিল্ডিংয়ে অবস্থিত হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি বহির্বিভাগ চিকিৎসালয় ও গভর্নমেন্ট ডিসপেন্সারি (জিওডি)। এরই মধ্যে মেরামতের অভাবে কোনোটির ছাদ থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা, সামান্য বৃষ্টি হলে কোনোটির ছাদ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে। আবার কোনোটার সামনের অংশ রাজ্যের সব ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। দেয়াল থেকে চুন খসে গেছে অনেক আগেই। টয়লেট থাকলেও ব্যবহার অনুপযোগী। জায়গার অভাবে কোথাও কোথাও ঠাসাঠাসি রোগী দেখেন চিকিৎসকরা। তবে ভিআইপি এলাকায় কয়েকটি চিকিৎসা কেন্দ্রের অবস্থা কিছুটা ভাল।
ঢাকার এই ১৯টি ডিসপেন্সারির মধ্যে তিনটি স্কুল হেলথ ক্লিনিক এবং ১৬টি জিওডি (গভর্নমেন্ট ডিসপেন্সারি)। জিওডিগুলো হচ্ছে- এজিবি কলোনি হাসপাতাল জোনে অবস্থিত মতিঝিল জিওডি, সেগুনবাগিচায় ১২তলা অফিস সংলগ্ন এজিবি জিওডি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জনসন রোড জিওডি, ধুপখোলা মাঠের পাশে গেণ্ডারিয়া জিওডি, স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে খিলগাঁও জিওডি, মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরে নয়াটোলা জিওডি, তেজগাঁও সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরে বিজি প্রেস জিওডি, নবাবগঞ্জ পার্কের মধ্যে হাজারীবাগ জিওডি, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে ঝিগাতলা জিওডি, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতর মোহাম্মদপুর জিওডি, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতর গ্রিন রোড জিওডি, আগারগাঁও পাকা মার্কেটে শেরেবাংলা নগর জিওডি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মিরপুর-১ জিওডি, ১০ নম্বর গোল চক্করের কাছে মিরপুর- ১০ জিওডি, বাউনিয়া বাঁধ ইসলাম এইড এনজিও অফিসের কাছের জিওডি ও লালকুঠি বাজার মাজার রোডে মিরপুর পুরাতন কলোনি জিওডি।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলা স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল ও শেরেবাংলা নগর স্কুলে ‘স্কুল হেলথ ক্লিনিক’গুলো অবস্থিত।
ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. এহ্সানুল করিম বলেন, কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরে ১৬টি সরকারি আউটডোর ডিসপেন্সারি আছে। এগুলো অবস্থা খুবই নাজুক। আমরা বেশ কয়েকবার এগুলো পরিদর্শন করেছি। জাইকার প্রতিনিধিরাও আমাদের সঙ্গে জিওডিগুলো পরিদর্শন করে গেছেন। তারা এই জিওডিগুলো আধুনিকীকরণ করতে আগ্রহী। ছয়টির জন্য ফান্ড পাওয়া গেছে। তবে কোন ছয়টি তা এখনও ঠিক হয়নি। খুব দ্রুত সময়ে তাদের সাথে এ সব নিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম সম্পাদন করা হবে।
বাকিগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কিছু ডিসপেন্সারি আছে সেগুলো বিভিন্ন কোয়ার্টারের ভেতরে অবস্থিত। সেখানে জায়গা কম, পরিবেশও নেই। তাই সেগুলোর দিকে এখনই দৃষ্টি সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যেগুলো মেরামত-সম্প্রসারণ করা যাবে, সেগুলো নিয়েই আপাতত জাইকার সাথে কাজ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, জাইকার সহায়তা নিয়ে চারতলা বিল্ডিং করতে চাই। এতে রোগীদের জন্য ওয়েটিংরুম ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। এখানে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন প্যাথলোজি টেস্টের ব্যবস্থা করা হবে, ঔষধও পাওয়া যাবে। এখন শুধু বিনামূল্যে ডাক্তারের পরামর্শ দেওয়া হয়। ঔষধও ফ্রি। তবে সব ঔষধ থাকে না। আশা করা হচ্ছে জাইকার সহায়তায় উন্নয়ন কাজ শেষ হলে প্যাথলজি টেস্টগুলোও ফ্রি থাকবে এ সব চিকিৎসা কেন্দ্রে।
আরএম/এসএমএম