• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯, ১০:৫৩ এএম

ফুলবাড়ীয়ায় লালচিনি তৈরির আখ আবাদে কৃষকের অনীহা 

ফুলবাড়ীয়ায় লালচিনি তৈরির আখ আবাদে কৃষকের অনীহা 
হাতেই তৈরি করছেন লাল চিনি

 

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে পাহাড়ি লাল মাটিতে এক সময় প্রচুর পরিমানে আখের আবাদ হত। অন্য ফসলের তুলনায় দামের দিক দিয়ে কম হওয়ায় আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করছেন কৃষকরা। তাছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও কম আখ চাষে। দেশের কোথাও লাল চিনির উৎপাদন না হলেও দিনের পর দিন কমছে লালচিনির উৎপাদন।
   
লাল চিনি শুধু মজাদারই নয়, স্বাস্থ্য সম্মত। লাল চিনির তৈরি ফুকা পিঠা, তিলে লাড়ু, মুড়ির মোয়া, নারিকেলের তক্তি খেতে খুব মজদার ও সু-স্বাদু। এছাড়াও লাল চিনিতে তৈরি হয় মজাদার খাবার ‘খীর’। এখনো ফুলবাড়ীয়ায় নতুন জামাইকে শ্বাশুড়ি গরম খীর খাইয়ে জামাই আদার করে থাকেন। গ্রামে প্রবাদ রয়েছে ‘করলে তৈরি লাল চিনির খীর’ খাওয়ার জন্য পড়ে যায় ভিড়। লাল চিনির মিঠাই ও খুব মজাদার। বোতলজাত করে রাখা হয় আখের রস। আর এ রস আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চলছে ফুলবাড়ীয়ায়।

পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে একটানা ফাল্গুন মাস পর্যন্ত আখ মাড়াই ও লাল চিনি তৈরির কাজ চলে। আখ চাষীরা সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি আখের চারা রোপন শেষে খর কুটা দিয়ে রোপনকৃত আখ ক্ষেতের আইলে ঢেকে দওয়া হয়। কিছুদিন পর চারা হতে অংকুর গজিয়ে বড় হয়ে আখ গাছে রূপ নেয়। এর পর শুরু হয় আখ ক্ষেতের পরিচর্যা। 

প্রয়োজন মতো জৈব ও রাসায়নিক সার দেয়ার পর পূর্ণাঙ্গ আখে পরিণত হয়। আখ মাড়াইয়ের পূর্বে চাষীরা লাল চিনি তৈরির জন্য জ্বালঘর তৈরি করে। লাল চিনি তৈরিতে প্রথমে ৩ শলা বিশিষ্ট লোহার চাপ যন্ত্রের সাহায্যে সেলু মেশিন অথবা বিদ্যুৎ চালিত মটর সংযোগ দিয়ে আবার কেউ কেউ চাপ যন্ত্রটি গরু-মহিষ দ্বারা ঘানি টেনে আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে রস বের করে। জ্বালঘরে চুলায় দেয়া লোহার বড় কড়াইয়ে পরিমান মতো কাঁচা আখের রস দিয়ে আধাঘন্টা পরিমান জ্বাল দিতে হয়। এক পর্যায়ে ঘন গরম রস আগুনের চুল্লী থেকে নামিয়ে পাত্রটিতে লাল চিনি তৈরির কারিগর কাঠের তৈরি হাতল দিয়ে দ্রুত ঘর্ষণ শুরু করে। আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ঘন জ্বাল দেয়া রস মিহি লাল দানায় রূপ নেয়।

প্রতি কাঠায় ৪৫ থেকে ৫০ টিন  আখের রস হয়। প্রতিটিনে ১৫ থেকে ১৬ কেজি কাঁচা রস হয়। ১টিন কাঁচা আখের রস থেকে লাল চিনি পাওয়া যায় ৪ থেকে ৫ কেজি। হাতে তৈরি লাল চিনি কৃষক প্রথমে রোদে শুকিয়ে ঝড় ঝড়া করে বিক্রি করে দেয় বেপারীদের কাছে।

জ্বাল ঘরের চুল্লীতে কাঁচা রস জ্বাল দেয়ার কাজটি করে আঁখের শুকনো পাতা দিয়েই।
উপজেলার পলাশতলী বয়ারমারা গ্রামের আখ চাষী সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এক সময় ৩/৪ একর জমিতে আখের আবাদ করতেন। দামের দিক দিয়ে কম হওয়ায় তিনি এখন ২/৩ কাঠা জমিতে আঁখের আবাদ করেন।
 
পলাশতলী গ্রামের ছাত্তার জানান, তিনি ২০ কাঠা জমিতে আখের আবাদ করেছেন। আখ আবাদে কৃষি বিভাগ থেকে তারা কোন পরামর্শ পান না। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কখনও খোজ নেন না। আখ বেশি মেন্দা পোকায় আক্রান্ত হয়। মেন্দা পোকা আখ ছিদ্র করে ভিতরে বাসা বাধে ফলে মরে যায় আখ। সরকারিভাবে আখ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হলে আবাদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

কৃষকের মতে গত বছরের চেয়ে এ বছর লাল চিনির বাজার অনেক ভালো। মৌসুমের শুরুতেই পাইকারি প্রতি মণ লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ২৪শ থেকে ২৫শ টাকায়। 

উপজেলা কৃষি অফিসার নার্গিস আকতার জানান, উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার কৃষক ১২৮০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করেছে। রাধাকানাই কালাদহ, পলাশতলী, বাকতা, বিদ্যানন্দ এসব এলাকার আখ চাষীদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি দেয়া হলে ফুলবাড়ীয়ায় অধিক লাল চিনি উৎপাদন হবে। এবার ৭ হাজার ১শ ৬৮ মেট্রিক টন লাল চিনি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
বিএস