• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০১৯, ০৮:২০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৯, ২০১৯, ০৯:০৯ এএম

পাল্টে যাচ্ছে মতিঝিলের দৃশ্যপট

ক্যাসিনো বন্ধ, চলছে সব ক্লাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম

ক্যাসিনো বন্ধ, চলছে সব ক্লাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম
ক্যাসিনো সামগ্রী

মতিঝিল ক্লাবপাড়ার দোকানগুলোকে রাতে বেচা বিক্রি বেশি হলেও এখন তা একেবারে কমে গেছে। যে কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। 

ব্যবসায়ীরা বলেন, ক্যাসিনো হোতাদের গ্রেফতারের পর ক্লাবগুলোর দৃশ্য পাল্টে গেছে। সেখানে নেই গভীর রাত পর্যন্ত জুয়াড়ি আর মদ্যপায়ীদের আনাগোনা। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করে কেউ আর হাক ডাক দিচ্ছেনা ক্লাবের সামনে। রাত সাড়ে দশটার পর ক্লাবপাড়া হয়ে পড়ে নিরব নিস্তব্ধ। ক্লাবের সামনের দোকানগুলোতে নেই আগের মতো জমজমাট বিক্রি। ক্রেতার অভাবে হতাশায় রয়েছে ক্লাবের সামনে থাকা অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ক্লাবে ক্যাসিনো চলাকালে তারা গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুচি সম্মত খাবার বিক্রি করতেন নিশাচর মানুষের কাছে। এখন আর সেই বেচা বিক্রি নেই। 

তবে ফকিরেরপুল ক্লাবসহ একাধিক ক্লাবে সব কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আতঙ্ক কেটে গেছে। ক্যাসিনো চালানোর সে সেডটি তালা বন্ধ রয়েছে। বাকী ক্লাবের সব কাজই চলছে সিডিউল মোতাবেক। মদ্যপান, ক্যাসিনো চালানো ছাড়া সব কিছুই আগের মত চলছে।  

এবিষয়ে কেয়ার টেকার জলিল ও নাইটগার্ড রবিউল জানান, স্যার, ক্লাব খোলা থাকলে এবং খেলা চললে প্রতি রাতে আমাদের খাবারের চিন্তা করতে হতো না। কিন্তু খেলা বন্ধ থাকায় আমরা সারা রাত না ঘুমিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। অন্ধকারে আমাদের খবর কেউ নেয় না।
 
 এদিকে অবৈধ ক্যাসিনো-বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চালায় র‌্যাব। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতার হন। পরদিন কলাবাগান ক্লাব থেকে গ্রেফতার হন কৃষকলীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ। পাশাপাশি ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারের একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করা হয় মতিঝিলের আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকেও।

১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সংস্থাটির অভিযানে জব্দ হয়েছে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, চেক ও এফডিআর।

র‌্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ক্যাসিনোসহ অপকর্মের কারণে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম, মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধান।

এছাড়া কাজী আনিসুর রহমান, কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এনামুল হক এনু ও সহ-সম্পাদক রুপন ভূইয়াসহ ১২ থেকে ১৫ জন গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। 
  
র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেছেন, অভিযানে দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধার হয়েছে ১৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক। আরও জব্দ করা হয়েছে ৭.২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার (৮ কেজি)। যার আনুমানিক মূল্য ৪ (চার) কোটি টাকা। এছাড়াও বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ২৫টি অস্ত্র জব্দ করেছে র‌্যাব। এসবের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে ইয়াবা, বিদেশি মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

অভিযানের কবলে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা। অবৈধ ক্যাসিনো-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য গ্রেফতার যুবলীগ ও কৃষক লীগের নেতাদের হোতা বলছে র‌্যাব। এছাড়া গ্রেফতার এড়াতে ক্যাসিনোসহ অপকর্মে জড়িত আওয়ামীলীগ যুবলীগ সেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগ, ঢাকা মহানগরের কাউন্সিলরসহ প্রায় ২০ জন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
 
র‌্যাব সূত্র বলছে, সমাজের বিভিন্ন অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও অবৈধ অর্থ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় র‌্যাব। গতকাল পর্যন্ত ৭ জন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে ২০১ জনকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাবের মুখপাত্র লে.কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাব দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নেমেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন