• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২০, ০৬:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০২০, ০৬:২৬ পিএম

কোভিড-১৯

কৃষকের ধান কেটে দিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতি গণশিক্ষা সচিবের আহবান

কৃষকের ধান কেটে দিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতি গণশিক্ষা সচিবের আহবান
প্রতীকী ছবি

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সারাদেশের মতো এই ভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে আছে বাংলাদেশও। কৃষকের মাঠের ধান পেকে গেছে কিন্তু লকডাউনের কারণে শ্রমিক পাচ্ছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক নেয়ার টাকাও জোগাড় হচ্ছে না। আবার এদিকে আগাম বন্যার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ফলে ফসল নিয়ে বিপদে পড়েছে কৃষক। তাদের সহায়তা করতে হাওরাঞ্চলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছেন গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন।

রোববার (১৯ এপ্রিল) তিনি বলেন, বৃহত্তর সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার হাওড় অঞ্চলের জেলাসমূহে বোরো ধান কাটার সময় শুরু হয়েছে। হাওড় এলাকায় বছরে একবারই ফসল ফলে। এই ফসল আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবার করোনাভাইরাস প্রভাবের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খাদ্য সঙ্কট হতে পারে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সেইদিক দিয়ে হাওড় অঞ্চলের ধান যথাসময়ে এবং দ্রুততার সাথে সংগ্রহ করা খুবই জরুরি।

সচিব আরও বলেন, এইক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সদস্যবৃন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। ধান কাটার জন্য এলাকার বাইর থেকে আসা শ্রমিকদের থাকার জন্য হাওড় এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দিতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। এই সঙ্কটে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকবৃন্দ তাদের এলাকার তাদের প্রাক্তন ছাত্র যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ এবং যারা লেখাপড়া না করে অলসভাবে সময় কাটায় তাদের উদ্বুদ্ধ করে এই চরম বিপদের সময় কৃষকদের পাশে দাড়ানো জন্য কাজ করতে পারেন। আমার বিশ্বাস আপনারা যদি আপনাদের প্রাক্তন ছাত্রদের প্রকৃতভাবে অনুরোধ করেন এবং উদ্বুদ্ধ করেন তবে তারা আপনাদের অনুরোধ শুনবে।

আগাম বন্যার শঙ্কায় সুনামগঞ্জে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ

ইউএনবি জানায়, করোনা আতঙ্কের মধ্যেও সুনামগঞ্জের ধান কাটতে শুরু করেছেন জেলার কৃষকরা। তবে আগাম বন্যার শঙ্কা থাকা জেলা প্রশাসনের  পক্ষ থেকে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলার সর্বত্র মাইকিংও করা হচ্ছে।

জেলায় অসংখ্য শ্রমিক অন্যান্য জেলা থেকে এসে ধান কাটায় যোগ দেয়ার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিনা পারিশ্রমিকে ধান কাটার সহায়তায় এগিয়ে আসছেন।

শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি ধান কাটার মেশিন দিয়ে কাটা শুরু করেছেন। টাঙ্গাইল থেকে শ্রমিক এসেছে। এছাড়া ঢাকা থেকে গার্মেন্টসকর্মীরা এসে ধান কাটায় নেমেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৫-৬ দিনের ভিতরে ফসল কাটা শেষ হবে।

‘শ্রমিকদের মাঝে করোনার ভয় নেই। তবে বজ্রপাত ও অকাল বন্যার আতঙ্ক রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

ধর্মপাশা উপজেলার কৃষক নেতা খায়রুল বশর ঠাকুর খান বলেন, পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলায় করোনায় আক্রান্তের হার বাড়ছে। করোনার এ উত্তাপ এসে লাগছে ধর্মপাশায়। ফলে অনেক শ্রমিক আসতে চাইলেও লকডাউন থাকায় আসতে পারছে না।

‘জমির মালিকরাও নেত্রকোনা থেকে শ্রমিক আনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তারা নিজেরাই নিজেদের ধান কাটতে হাওরে নেমেছেন। এলাকার শ্রমিকরা কায়দা করে ধান কাটার মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে এখানকার হাওরে শ্রমিক সংকট থেকেই যাবে,’ যোগ করেন তিনি।

তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের কৃষক আকমল আলী জানান, করোনায় গৃহবন্দী হয়ে পড়ায় এলাকার মানুষের আয় রোজগার নেই। সামনের দিনগুলো খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিতে পারে। তাই আমরা করোনাকে উপেক্ষা করে হাওরে ধান কাটা শুরু করেছি। অন্য জেলা থেকেও শ্রমিক এসে ধান কেটে দিচ্ছেন। এছাড়া সরকার যে ধান কাটার মেশিন দিয়েছে তা দিয়ে দিনে কমপক্ষে ৩০ কেদার জমির ধান কাটা যায়। এ হিসেবে শ্রমিক তেমনটি নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের এবার বাম্পার ফলন ঘরে উঠবে। 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার হাওরে এবার বোরো চাষাবাদ হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টন।

সিলেট আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অন্যান্য বছর কমপক্ষে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।এখন পর্যন্ত এই পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। শুস্ক আবহাওয়া বিরাজমান। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সফর উদ্দিন জানান, ১৭ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ২২০ মিলিটার বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক এসেছেন। শ্রমিক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ধান কাটার মেশিন বরাদ্দ দিয়েছেন। এসব মেশিন দিয়ে কৃষকরা দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে।’

এসএমএম

আরও পড়ুন