• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ৩১ চৈত্র ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২০, ০৭:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১২, ২০২০, ০৮:০৭ পিএম

বিশ্বব্যাংক এর প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক দৈন্যদশার শঙ্কায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ

অর্থনৈতিক দৈন্যদশার শঙ্কায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ
প্রতীকী ছবি

কোভিড-১৯ এর হানায় খাদের অতলে তলিয়ে যাওয়ার মুখে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি। মাত্র কয়েক মাস আগেও উন্নয়নের যে আশা দেখা দিয়েছিল, তা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে এই ভাইরাসের থাবা।

করোনা-মোকাবেলায় লকডাউনের কোপে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সঙ্গীণ পথে এগিয়ে চলেছে।

রোববার (১২ এপ্রিল) এমন শঙ্কা ও হতাশাব্যাঞ্জক কথা শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক। 

ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও চিকিৎসক ও অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, ভবিষ্যতে এই অঞ্চলই হয়ে উঠতে পারে করোনার ‘হটস্পট’। এর জেরে ধসে পড়তে পারে দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশের অর্থনীতি।

বিশ্বব্যাংক জানায়, গত কয়েক দশক ধরে দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে সুফল মিলছিল, লকডাউনের ফলে তা প্রবল ঝুঁকির মুখে। অনিশ্চয়তার মুখে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভবিষ্যৎ। লকডাউনের জেরে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বির্পযস্ত হওয়ার প্রভাব পড়েছে সমাজের সব স্তরেই। তবে অর্থনৈতিকভাবে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমদানি-রফতানি নেই, বেহাল পর্যটন শিল্প, বন্ধ কল-কারখানা, মার খাচ্ছে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। যার জেরে হঠাৎই কাজ হারিয়েছেন দিনমজুর বা অস্থায়ী কর্মীরা।

স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে সামাজিক বা অর্থনৈতিক সুরক্ষা—সবেতেই অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যৎ।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আদর্শ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়া। পর্যটন শিল্প অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, বস্ত্র শিল্পে চাহিদা নেই, ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীর কাজেও ধাক্কা লেগেছে। 

বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস, এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশে মন্দা, কোনও দেশে বা মহামন্দাও দেখা দিতে পারে। চলতি আর্থিক বছরে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াতে পারে ১.৮ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশে। যদিও বিশ্বব্যাপী করোনা-সংক্রমণের আগে এ অঞ্চলে৬.৩ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি পূর্বাভাস করেছিল বিশ্বব্যাংক।

‘শহুরে দরিদ্ররা সবচেয়ে বেশি খতিগ্রস্ত হবে। গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র সংখ্যা বাড়বে। পোশাকখাতে চাহিদা হ্রাস পাবে। বেকারত্ব বাড়বে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের জিডিপি বাড়বে না। বরং সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে’

............‘’............

ওই সংস্থার দাবি, এই আবহে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মলদ্বীপ। মূলত পর্যটন শিল্পের উপরে নির্ভরশীল মলদ্বীপের জিডিপি ১৩ শতাংশ নিচে নেমে যেতে পারে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৫.৯ শতাংশ ও ২.২ শতাংশ নিম্নমুখী হতে পারে। স্বস্তিতে দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতির হেভিওয়েট দেশ ভারতও। এ দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার ঘোরাফেরা করবে ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশের মধ্যে। করোনা-পরিস্থিতির আগে যা ছিল ৪.৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।

বিশ্বব্যাংকের  হুঁশিয়ারি, আর্থিক দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও সামাজিক বৈষম্যের খাতেও বড়সড় ভাটার টান পড়বে ভারত সহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে। সেই সঙ্গে ভারতের উদাহরণ দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দৈন্যদশার কথাও উল্লেখ করেছে এই সংস্থাটি। 

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে দেশটি।

তারা বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছরে মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ হতে পারে।

ওয়াশিংটন সদর দফতর থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের ওপর প্রাক্কলন প্রকাশ করেছে বিশ্বের বৃহত্তম ঋণদান সংস্থা।

রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছর ছিল ৮.২ শতাংশ। আগামী বছর কি হতে পারে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। দিয়েছে আগাম পূর্বাভাস। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও কমে দাঁড়াবে এক দশমিক দুই থেকে দুই দশমিক নয় শতাংশে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও তা চার শতাংশের নিচেই থাকবে।

গত দশ বছরের বেশি সময় টানা সাত শতাংশের প্রবৃদ্ধির কোটা ছাড়িয়ে আট শতাংশের ঘর ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

রিপোর্টে বলা হয় করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখ্যযোগ্যভাবে প্রভাবিত হবে। শহুরে দরিদ্ররা সবচেয়ে বেশি খতিগ্রস্ত হবে। গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র সংখ্যা বাড়বে। পোশাকখাতে চাহিদা হ্রাস পাবে। বেকারত্ব বাড়বে।

বিশ্বব্যাক এক বিবৃতিতে বলেছে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্রমবর্ধমান মানবিক ক্ষতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিণতির মধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের জনগণ বিশেষ করে দরিদ্রতম ও হতদরিদ্র মানুষকে রক্ষা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক তার মতামতে আরও বলেছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সাতটি দেশের অর্থনীতিতে বড় রকমের ধ্বস নামতে পারে। এর মধ্যে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের জিডিপি বাড়বে না। বরং সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস যদি সত্যি হয় তাহলে এটাই হবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আর্থিক পারফর্মেন্স। আনন্দবাজার ও ভয়েস অব আমেরিকা।

এসএমএম

আরও পড়ুন