• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ০২:৪২ পিএম

ময়মনসিংহে ২ বছর ধরে অনুপস্থিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক

ময়মনসিংহে ২ বছর ধরে অনুপস্থিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
ফুলবাড়ীয়া নয়নমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে চটে বসে ক্লাস করছে শিক্ষাথীরা -ফাইল ছবি

 

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নের নয়নমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বাকি শিক্ষকদের গড় হাজিরা থাকায় দিনের পর দিন বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। প্রধান শিক্ষকের কাছে বিদ্যালয়ের সংস্কারের ৪০ হাজার টাকা আসলেও তা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় না করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ।

বিদ্যালয়ের কক্ষের টিনের বেড়া ভেঙ্গে জরাজীর্ণ অবস্থা। ভিতর থেকে বাহির দেখা যায়। বেঞ্চ না থাকায় মাটির ফ্লোরে ধুলাবালিতে চটে বসে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে।  
 
জানা যায়, উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নের নয়নমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০০৯ সালে স্থাপিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হিসাবে স্বীকৃতি পায়। সরকারি ঘোষণা হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ও তৎকালীন সভাপতি ৪ জন শিক্ষক থাকার পরও আবারো নতুন করে সাবিনা আকতার ও মেহেরুন নেছাকে নিয়োগ দেয়া হয়। সরকারি নিয়মানুযায়ী ৪ জন শিক্ষকের বিলভাতা হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক বেশি নিয়োগ দেয়ায় শরিফা খাতুন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ফলে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হলেও শিক্ষকদের বিলবেতন আটকে যায়। পাশপাশি নিয়োগের নামের ঘুষ বাণিজ্যে কথা প্রকাশ পাওয়ার পর বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করে। এরপর ২০১৭ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আসা বন্ধ করে দেন। সে সময় প্রধান শিক্ষক প্রকল্পের ৪০ হাজার টাকার কোন সংস্কার না করেই আত্মসাৎ করেন বলে সহকারী শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ২ বছর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় অন্যান্য শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে গড় হাজিরা দিয়ে থাকেন। সরেজমিন গেলে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি কোন দরজা জানালা নেই। এরইমধ্যে ভেঙ্গে গেছে টিনের বেড়া। ঘরের ভিতর থেকে বাহির দেখা যায়। মেঝে কাঁচা হওয়ায় শ্রেণি কক্ষে ধুলা উড়ছে। নেই কোনো চেয়ার টেবিল। কাঁচা মেঝেতে ধুলাবালিতে চটের উপর বসে আছে ২য় শ্রেণির ৬/৭ জন শিক্ষার্থী। পাশের ১ম শ্রেণি কক্ষের অবস্থা একই। সেখানে বসে আছে ৫/৬ জন শিক্ষার্থী। শিশু শ্রেণিতে এক কোনায় যেখানে ধুলা কম সেখানে বসে আছে ৪/৫ জন কোমল মতি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের কাপড় চোপড়ে লেগে আছে বিদ্যালয় কক্ষের ধুলাবালি। 

অফিস কক্ষের অবস্থা আরও করুন। চেয়ারগুলো ভেঙ্গে গেছে। দরজা জানালা নেই। ভিতরে বসা দুজন সহকারী শিক্ষক শরিফা খাতুন ও শামীমা ইয়াসমিন। বিদ্যালয়ের নেই কোন সাইন বোর্ড। একটা অর্ধেক বাঁশের মাথায় উড়ছে জাতীয় পতাকা। 

উপস্থিত থাকা ২ জন শিক্ষক স্বীকার করলেন ২ বছর ধরে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির কথা। তাদের ভাষ্যমতে, প্রধান শিক্ষক ২ বছর ধরে বিদ্যালয়ে না আসায় এরই মধ্যে কমে গেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে কাগজে কলমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১শ ৯৭ জন কিন্তু বাস্তবে এ হিসাব মেলানো খুবই কঠিন। 

বিদ্যালয়ে বারান্দায় পায়চারী করছেন অভিভাবক জোসনা আরা। তার ছেলে গতবার পিএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সে এখন ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয় থেকে খুব চাপ দেয়া হয়েছে জন্ম নিবন্ধন কার্ড জমা দেয়ার জন্য। কিন্তু তার ছেলেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করার সময় জন্ম নিবন্ধন কার্ডের মূল কপি জমা দিয়ে ভর্তি করে ছিলেন। প্রধান শিক্ষক সে সময় জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি ফেরত দেয়ার কথা বললেও আর ফেরত দেননি। তাই এক বছর ধরে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসছেন কার্ডটি ফেরত নেয়ার জন্য। এখন পর্যন্ত তিনি প্রধান শিক্ষকের দেখা পাননি। 

বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির বালিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার ফরিদা ইয়ামিন জানান, ২ বছর ধরে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক যান না। বাাকি যারা আছে তারাও অনিয়মিত। বিদ্যালয়ে কোন লেখা পড়া হয়না। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। 

বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীর হৃদয় জানায়, একটা করে ক্লাস হয়। চটে বসে ক্লাস করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। কাঁচা মেঝে হওয়ায় প্রতিদিন কাপড় ময়লা হয়। 

২ বছর ধরে অনুপস্থিত থাকা নয়নমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দিন প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ সময় তিনি প্রধান শিক্ষকের আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। 

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জীবন আরা জানান, নয়নমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ২ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। প্রকল্পের ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

এএস/