• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৫, ২০১৯, ০২:১০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৫, ২০১৯, ০৮:১৯ পিএম

ইসির সতর্কতায়ও ভোটার হতে মরিয়া রোহিঙ্গারা

ইসির সতর্কতায়ও ভোটার হতে মরিয়া রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা ঠেকাতে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ৪টি জেলার ৩২টি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এসব এলাকায় ভোটার করতে বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এসব  উদ্যোগের মাঝেও সচ্ছল রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানসহ সংলগ্ন এলাকায় ভোটার হতে মরিয়া হয়ে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। 

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা মিথ্যা/জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯- এর ১৮ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম দফায় ২৩ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরবর্তীতে ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। প্রথম দফায় কক্সবাজার জেলার সদর ও পেকুয়া উপজেলায় ভোটার নিবন্ধন শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফসহ অন্যান্য উপজেলায় আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে ভোটার তথ্য সংগ্রহের কাজ হতে পারে বলে জানান নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফখরুল ইসলাম। 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যারা ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ২০০৭-২০০৮ সালে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন কিংবা যাদের অনুকূলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট জারি করা হয়েছে। তাদের জন্য এ বর্ণিত বিধান প্রযোজ্য হবে না। ঐ সময়ে এসব অঞ্চলে মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশি আইডি কার্ডধারী হয়ে ভোটার হয়ে গেছে। 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের ঘটনায় মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে থেকে সর্বাধিক প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম উদ্বাস্তু হয়ে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়। ২০১৬ সাল ও এর পূর্বে আসা আরো প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গাসহ ১১ লাখ ১৯ হাজারের মতো রোহিঙ্গা সেসময় সরকারের পরিচালিত বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় এসেছিল। এসব রোহিঙ্গা এখানকার আশ্রয় শিবিরগুলোয় অবস্থান করছে। 

২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশের তথ্য। এসব আটক ও ফেরত পাঠানোর সংখ্যা মোট পলাতকের স্বল্পসংখ্যক বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আশ্রয় শিবিরগুলোয় কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনি, দেয়াল বা ঘেরা না থাকার সুযোগে প্রতিনিয়ত শত শত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ও পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীসহ স্থানীয়দের অভিযোগ। 

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন ক্যাম্পের অনেক রোহিঙ্গা জানান, শত শত সচ্ছল রোহিঙ্গা তাদের পুরনো আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতদের মাধ্যমে ভোটার হওয়ার জন্য চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এরা ভোটার হতে কৌশলে চলে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া, রাউজান, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম সিটি, বাঁশখালী, কর্ণফুলীসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঐসব এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসায় অনেক রোহিঙ্গা লেখাপড়া, শিক্ষকতা, হাফেজ, মসজিদের মুয়াজ্জিন, বিভিন্ন লোকের বাসা-বাড়ি, দোকানে, মৎস্য ঘেরসহ নানা পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। সেই সুবাদে ভোটার হতে রোহিঙ্গারা সেসব এলাকায় যাচ্ছে। কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলায় ভোটার হতে যেভাবে কড়াকড়ি রয়েছে, অন্য জেলায় সেই ধরনের নজরদারি না থাকায় রোহিঙ্গারা সহজে ভোটার হতে পারে বলে রোহিঙ্গারা জানান। 

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দেশের চার জেলা- চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের ৩২টি উপজেলার উপর বিশেষ নজর রয়েছে ইসির। এর মধ্যে কক্সবাজারের সদর উপজেলা, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা। এসব এলাকায় ভোটার করতে বিশেষ এলাকায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্যের কমিটির রূপরেখা দেয়া হয়েছে। 

ভোটার তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সকল জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসমূহ অনলাইনে যাচাই করবেন। যাচাইকালে নিম্নলিখিত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করবেন: (ক) ভাই/বোনের ডাটাবেইজে পিতা/মাতার নামের সাথে আবেদনকারীর ফরম-১ এ উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে। (খ) চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সাথে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে। (গ) প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে উল্লিখিত জেলাসমূহে যদি কেউ সচরাচর নিবাসের দাবি করে তবে সেই দাবির যথার্থতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। শুধু একটি নিবাসের ঠিকানাই এ জন্য যথেষ্ট হবে না।

নিবাসের প্রমাণস্বরূপ তাকে এ সংক্রান্ত প্রণীত অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ ফরম অনুযায়ী চাহিত সব তথ্য দিতে হবে। যদি বর্ণিত জেলাসমূহে এই সমস্ত ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তির সূত্রে তালিকাভুক্তির দাবি করে তবে তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও এতদসংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সংশ্লিষ্ট দলিলাদির তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে। যারা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের সাথে বৈবাহিক সূত্রে ভোটার তালিকাভুক্তির দাবি করবেন তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নাগরিক সনদপত্রসহ দলিলাদির তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।

অন্য কোনো সূত্রে কেউ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত দাবি করলে তাদেরকে এতদসম্পর্কিত প্রমাণাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে। উপজেলা বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত দেবেন। গ্রহণযোগ্য কেসগুলোতে উপজেলা বিশেষ কমিটির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে অবহিত করার পর তিনি ঐ সমস্ত নাগরিকদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে তাদেরকে কেন্দ্রে আসার জন্য নোটিশ জারি করবেন।

এফসি