• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২০, ০৩:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১২, ২০২০, ০৩:৩৩ পিএম

পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণ

পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণ
সন্তু মুখোপাধ্যায় (১৯৫১-২০২০)

বুধবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দক্ষিণ কলকাতার নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। 

কিছুদিন আগেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে সন্তু মুখোপাধ্যায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর আগেও কিছুদিন ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। তখনই তার সুগারের সমস্যা ও ক্যান্সারের চিকিৎসার কথা জানা যায়। তবে সেসময় কিছুটা সুস্থ থাকায় হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে যান তিনি।

কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী গোপা মুখোপাধ্যায় মারা যান। সন্তুর দুই কন্যার একজন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, অন্যজন অজপা মুখোপাধ্যায়।

বড়পর্দার পাশাপাশি ছোটপর্দাতেও বেশ প্রভাবশালী অভিনেতা ছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায়।

তার মৃত্যুতে টালিগঞ্জের শিল্পীমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

১৯৫১ সালের ১৭ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। তপন সিংহের ‘রাজা’ ছবি দিয়ে তার বড়পর্দায় অভিনয়ের শুরু। একে একে তরুণ মজুমদার, হরনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

হারমোনিয়াম, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা সহ অজস্র ছবিতে তার অভিনয়ের মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকরা।

প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাঙালির মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গানও গাইতেন এই অভিনেতা।

সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে টালিগঞ্জে শোকের ছায়া

মন ভাল নেই টলিপাড়ার। চলে গেলেন কিংবদন্তী অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল।  বিষাদের সুর বেজে চলেছে টলিউডের অন্দরে।

অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মনে পড়ে যাচ্ছে তার প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘হেমন্তের পাখি’র কথা। ওই ছবিতে তার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। 

আনন্দবাজার ডিজিটালকে পরম বলছিলেন, খুব কাছ থেকে চিনতাম তাকে। আমার মায়ের ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ছিলেন সন্তু কাকু। এক সঙ্গে কত আড্ডা দিয়েছি। খেতে খুব ভালবাসতেন। আমুদে, বৈঠকি, মেজাজি মানুষ ছিলেন। খুব খারাপ লাগছে।

মাসখানেক আগেই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। চলছিল চিকিৎসাও। এই চলে যাওয়া মানতে পারছেন না অপরাজিতা আঢ্যও। একসঙ্গে জলনূপুর ধারাবাহিকে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কাজ করেছেন তারা। স্মৃতিকাতর আজ তিনিও। বলছিলেন, কাছের মানুষ ছিলেন। প্রচুর শিখেছি তার কাছ থেকে। আমাকে খুব ভালবাসতেন। অসুস্থ ছিলেন অনেক দিন থেকেই সেটা শুনেছিলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে এমনটা ঘটবে সেটা কিছুতেই ভাবিনি।

তপন সিংহের ‘রাজা’ ছবি দিয়ে তার বড়পর্দায় আসা। এর পর একে একে তরুণ মজুমদার, হরনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ পরিচালকের ছবিতে চুটিয়ে কাজ করেছেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। 

বড়পর্দার পাশাপাশি  মঞ্চ, যাত্রা সব ক্ষেত্রেই নিজের ছাপ রেখে গেছেন তিনি। ছোটপর্দাতেও কাজ করেছেন শেষ জীবন অবধি। 

সম্প্রতি ‘নক্সি কাঁথা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন তিনি। সেই ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্র মানালি দে’র ভাষায়, নক্সি কাঁথার সেটে অনেকটা কাছ থেকে পেয়েছি সন্তু কাকুকে। খুব ভাল মানুষ ছিলেন। অত বড় একজন অভিনেতা অথচ কিছু ভুল করলে কী সুন্দর করে শুধরে দিতেন। খুব মজা করতেন। শিবুদা–নন্দিতাদির ‘গোত্র’তেও একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। কী বলব জানি না। খুব খুব খারাপ খবর।

‘নক্সিকাঁথা’, ‘জলনূপুর’, ‘কুসুম দোলা’, ‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকে সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। স্নেহার কথায়, একটা বাদশাহী ব্যাপার ছিল সন্তুদার মধ্যে। গাড়ি থেকে নামা কণ্ঠস্বর, অভিনয় সবটাই রাজকীয়। সেই সন্তুদা শুয়ে পড়েছেন দেখে খুব বড় ধাক্কা লেগেছিল। খুব ইয়ার্কিও করতেন। বলতেন, আর কথা বলার লোক কই? এই তো তোরা কয়েকজন।

অভিনেত্রী পায়েল সরকার ক্যারিয়ারের শুরুতেই অভিনয় করেছিলেন অভিনেতার সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই স্মৃতির রেশ টেনে তিনি বললেন, সেই ভাবে কাজের সুযোগ না হলেও, ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকে পেয়েছিলাম। খুব খারাপ লাগছে। অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের সবার জন্য।

অভিনেতা শুভাশিষ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ৪০ বছরের সম্পর্ক আমাদের। একবার এক নাটকের মঞ্চে আলোকের এই ঝর্ণা ধারা গেয়েছিলেন— আজ সেই গান খুব মনে পড়ছে। একসময় আমার গলার স্বর থেমে গিয়েছিল, সন্তুদা নিজে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দিয়েছিলেন, এমন কি নিজেও গিয়েছিলেন সঙ্গে। যাত্রায় যাওয়ার পর যাত্রার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। অসুস্থতা নিয়েও সিরিয়ালে কাজ করতেন।

পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মনে পড়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে কাটান মুহূর্তগুলোর কথা। নিজের বাবার সঙ্গেও মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। বলছেন, বাবা মনে করতেন উত্তম কুমারের পর তিনি বাংলা সিনেমা জগতের সবচেয়ে প্রমিসিং অভিনেতা মন ভাল নেই তার, একেবারেই।

পরিচালক অর্জুন দত্ত থেকে সুদীপ্তা চক্রবর্তী সবার গলাই বিষাদ মাখা। টলিউডের আনাচে কানাচে আর শোনা যাবে না সেই মায়াময় কণ্ঠস্বর।

এসএমএম