• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৯, ২০২১, ১২:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৯, ২০২১, ০১:০৫ পিএম

তারকাদের ‘মা’ ভাবনা

তারকাদের ‘মা’ ভাবনা

পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর ডাক ‘মা’। আনন্দ, বেদনা আর কল্পরাজ্যের যত সব অনুভূতির আলোড়ন—সবই মাকে ঘিরে। ‘মা’ শব্দটি নিজেই একটি অসমাপ্ত গল্প, শ্রেষ্ঠ কবিতা, সময়ের সেরা উপন্যাস। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই ‘মা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে বিবেচিত। মা, মাদার, মম, মাম, আম্মা— যা-ই বলি না কেন, একজন সন্তানের কাছে তার মায়ের চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো কিছুই এই পৃথিবীতে নেই।

আজকের এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকারা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানিয়ে তাদের না বলা কথা প্রকাশ করেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক তারকাদের কাছ থেকে তাদের মা সম্পর্কে—

শবনম বুবলী: মায়ের কথা বলতে গেলেই সবার আগে আমার নানুর কথা ভীষণ মনে পড়ে। বিশেষত রোজার মাস এলে নানুর কথা যেন একটু বেশিই মনে পড়ে। কারণ নানুর সঙ্গে থেকে থেকেই আমি নামাজ পড়া শিখেছি, রোজা রাখতে শিখেছি। সেই নানু যখন আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন তখন আমার আম্মুকে দেখেছি তিনি কতটা কষ্ট পেয়েছেন। সত্যি বলতে কী মা এমন একজন মানুষ প্রতিটি মানুষ তার মনের ভেতরে শ্রদ্ধার স্থানে রেখে দেন। নানু চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু নানু আমার মায়ের মাঝে, আমার মাঝে বেঁচে আছেন। আমরা যখন শুধু তিন বোন ছিলাম, তখন সবার ছোট বলে আম্মু আমাকে মোহাম্মদ বলে ডাকতেন। আমাকে ছেলেদের পোশাক পরিয়ে রাখতেন। কিন্তু যখন আমি একটু বড় হতে লাগলাম, যখন বুঝতে শিখেছি যে মোহাম্মদ ছেলেদের নাম তখন আমার খুব অভিমান হতো, কেন আমাকে ছেলেদের নামে ডাকা হবে। যাই হোক পরবর্তী সময়ে আম্মু আমাকে ভুবন বলে ডাকতে শুরু করেন। সেই যে আমাকে আম্মু ভুবন বলে ডাকতে শুরু করলেন, এখনো ভুবন বলেই ডাকেন। আমার আজকের অবস্থানের পেছনে আম্মুরই অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি যখন সিনেমাতে কাজ শুরু করি তখন পরিবার থেকে প্রতিবন্ধকতা ছিল। আম্মুর মত ছিল না। কিন্তু আমি আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি এমন কিছু করব না, যার জন্য তোমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ আমি আম্মুকে দেওয়া কথা রেখেছি, এটাই আমার ভালোলাগা।

দিলারা হানিফ পূর্ণিমা: মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়ায় আমি আজকের পূর্ণিমা। তাই মায়ের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমার মাকে সব সময় ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন। সেই মায়েরই মেয়ে আমি নিজেও একজন মা। তাই মায়ের কষ্টটা এখন খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। মায়ের কোনো তুলনা হয় না। না জেনে না বুঝে মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আর কখনো মাকে কষ্ট দিতে চাই না। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আর আমার বাবাকে যেন আল্লাহ বেহেশতবাসী করেন, সেই দোয়াও চাই সবার কাছে।

ওমর সানী: বেশ কয়েক বছর আগে আমার মা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। সব সময়ই মায়ের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমার মা-বাবাকে বেহেশত নসিব করেন। দোয়া ছাড়া তো আসলে এখন আর কিছুই করার নেই। আমার জীবনের চলার প্রতিটি পদক্ষেপে মাকে খুব মসি করি। মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন অনেক দেরিতে শুটিং থেকে বাসায় ফেরা হতো আমার। তখন মনে মনে ভাবতাম সবাই রাতের খাবার খেয়ে ফেললেও আমার মা নিশ্চয়ই খাননি। ঠিকই বাসায় ফিরে দেখতাম, মা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আসলে মায়ের সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। মা যে আমার জীবনে কী ছিলেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। এমনও হয়েছে মায়ের হাতে রাতে টাকা দিয়েছি ওষুধ কেনার জন্য। কিন্তু সকালে আমি টাকা চাওয়ায় আমাকে ওই টাকা থেকেই দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আমি যখন জানতে পারি রাতে মায়ের জন্য ওষুধ কিনে বাসায় ফিরেছি। মাকে নিয়ে কথা বলে শেষ করা যাবে না।

বিদ্যা সিনহা মিম: প্রতিটি সন্তানের কাছেই তার মা সেরা মা। আমার কাছেও আমার মা সেরা। মাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না। শুটিং বলেন, বেড়াতে বলেন, সব কাজেই মাকে আমার সঙ্গে চাই। মা আমার সঙ্গে থাকা মানেই যেকোনো কাজের সাহস পাওয়া। মায়ের জন্যই আমি আজকের মিম।

মেহজাবিন চৌধুরী: আমার জীবনে চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপে আম্মু আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। অভিনয়জীবনের আজকের সাফল্যেও পেছনে আম্মু আমার প্রতিটি পদক্ষেপে সঙ্গে ছিলেন। যে কারণেই কিন্তু আমি আজকের মেহজাবিন হতে পেরেছি। না জেনে না বুঝে আম্মুকে কষ্ট দিয়েছি। তবে তাকে অনেক বেশি কষ্ট দিইনি আমি। তারপরও আম্মুর কাছে স্যরি। আম্মু প্রায়ই তার শরীরের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তার মাথা ব্যথা করে, কোমর ব্যথা করে, ডায়াবেটিসের সমস্যা। তাই এসব কথা যখন শুনি তখন মনে হয় নিজের শরীরটা কেটে যদি আম্মুকে দিয়ে দিতে যদি পারতাম, তাতেও যদি আম্মু পুরোপুরি সুস্থ থাকতেন আমি শান্তি পেতাম।

আজমেরি হক বাঁধন: বাবা-মা প্রথম দিকে সাপোর্ট করতেন না আমি মিডিয়াতে কাজ করি। আমি মেডিকেলে পড়তাম। আসলে মা আমাকে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। ভেতরে মূল্যবোধ তৈরি করেছেন, ভালো-মন্দ বিভাজন করতে শিখিয়েছে। যার কারণে আমার জীবনের পথচলাটা সহজ হয়েছে। অনেক ঝড়-ঝাপটার পর আমি আজকের এই বাঁধন এখানে দাঁড়িয়ে আছি শুধু মায়ের ওই শিক্ষাগুলোর কারণে। বাবা-মার স্নেহ ভালোবাসার কারণে। মিডিয়ার কাজ নিয়ে যে শঙ্কা বাবা-মার ছিল তা কেটে যায়, যখন আমি পড়ালেখা শেষ করে ঠিকঠাক মতো মিডিয়াতে কাজ করছি এবং আমার বাচ্চাকে টেক কেয়ার করছি।

চঞ্চল চৌধুরী: ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়ে। অনেক দরিদ্রতায়, অনেক কষ্টে আমাদের অনেকগুলো ভাইবোনকে মানুষ করার যুদ্ধে বাবার সাথে আমার মা ও অবিচল ছিলেন। মায়েরা মনে হয় পৃথিবী আসেনই নিজের সুখ সাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, সন্তানকে মানুষ করার জন্য। আর আমরা করপোরেট সন্তানরা একটি বিশেষ দিবস নির্ধারণ করে মাকে শ্রদ্ধা জানাই, ভালোবাসা জানাই। আহা রে মায়ের প্রতি ভালোবাসা! সকল মায়ের জন্য আমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। বিশেষ একদিনের জন্য নয়। প্রতিদিনের, প্রতি মুহূর্তের।