• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২১, ১২:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩০, ২০২১, ১২:২৯ পিএম

ঋতু আসে, কিন্তু ঋতু আসেন না

ঋতু আসে, কিন্তু ঋতু আসেন না

মে মাসের ৩০ তারিখ মন খারাপের। বিশেষ করে সিনেমাপ্রেমীরা গত আট বছর ধরে এই দিনে বেদনার নীল সাগরে হাবুডুবু খান। চোখে জল আর বেদনার্ত কাঁপা কণ্ঠে কেউ কেউ তো আফসোস করে বলেই বসেন—বড্ড দ্রুত চলে গেলেন!

সেই আফসোসের নাম ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীরই কাঙিক্ষত পরিচালক তিনি।

২০১৩ সালের আজকের দিনে এই জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্তলোকের পথে পাড়ি জমান। মাত্র ৫১ বছর চলে যান তিনি। মানুষের গড় আয়ুর হিসেবে তার এ বয়সে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া কষ্টকর বটে। তবু মেনে নিতে হয়। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম মেনে না নিয়ে উপায় নেই মানবকুলের।

Did you know Rituparno Ghosh loved posto and biryani? | Bengali Movie News  - Times of India

বছরের ছয় ঋতু ঘুরে ফিরে আসে, কিন্তু ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে চরিত্র নিয়ে খেলা করা ঋতু ফিরে আসেন না। ফলে সৃষ্টি হয়েছে শূণ্যতা। সেই শূণ্যতা আজও অনুভূত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

জীবদ্দশায় ঋতুপর্ণ ২০টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। সেগুলো হলো— ‘হীরের আংটি’, ‘১৯ এপ্রিল’, ‘দহন’, ‘বাড়িওয়ালি’, ‘অসুখ’, ‘উৎসব’, ‘শুভ মহরত’, ‘চোখের বালি’, ‘রেইনকোট’, ‘অন্তরমহল’, ‘দোসর’, ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’, ‘খেলা’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘আবহমান’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চিত্রাঙ্গদা’ ও ‘সত্যান্বেষী’।

ঋতুপর্ণ ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’, ‘মেমরিজ ইন মার্চ’ ‍ও ‘চিত্রাঙ্গদা’ ছবিতে নিজেই অভিনয় করেছেন। এছাড়া চারটি ছবিতে গান ও দুটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন।

Outlook India Photo Gallery - Rituparno Ghosh

তার ছবিতে বেশি দেখা গেছে প্রসেনজিৎ, যীশু ও রাইমা সেনকে। তিনি প্রথম ভারতীয় পরিচালক, যার ছবিতে বচ্চন পরিবারের চারজনই অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া তার ছবিতে রাখী, নন্দিতা দাস, দীপ্তি নাভাল, কিরণ খের, মনীষা, অজয়, অর্জুন, বিপাশা বসুর মতো জনপ্রিয় বলিউড অভিনয়শিল্পীদের দেখা গেছে।

নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে ঋতুপর্ণ সংশয়ে থাকতেন সবসময়। লিঙ্গ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে অপারেশনের মাধ্যমে নিজের লিঙ্গ পরির্তনের চেষ্টাও করেছিলেন। জটিল অস্ত্রপচার এবং মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবনের ফলেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই নির্মাতা।

পুরুষ হলেও নিজের অন্তরেই লুকিয়ে ছিল নারীত্ব। তার লিঙ্গ নিয়ে হাজারও সমালোচনার পরেও নিজের দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঋতুর জবাব ছিল, “শিল্পীর কোনো লিঙ্গ হয় না।”

Remembering Rituparno Ghosh: Female Gaze | Lifestyle News,The Indian Express

তবে তিনি নারী, পুরুষ কিংবা তৃতীয়লিঙ্গের হোন না কেনো —মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন খাঁটি সোনা। তার কাছে জীবনের মূল্যবোধটাই আসল। যৌনতার ট্যাবু ভেঙে শরীরকে তিনি অন্য ধাঁচে প্রয়োগ করেছেন । পুরুষতন্ত্র, নীতি-নৈতিকতা, নারী-পুরুষবাচক লিঙ্গ বৈষম্যে তিনি ছিলেন ক্ষুরধার সাহসী।

ঋতুপর্ণ ছিলেন সময়ের থেকে বহু এগিয়ে। যাকে বলে ‘এহেড অব ইটস টাইমস’। সমাজ কী বলছে, নিন্দার স্বর কতটা উঁচুতে তুলছে—এসব কিছু তোয়াক্কা করতেন না তিনি। বরং ছবি তৈরির মাধ্যমে নিজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন বহুবার।