• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০১৯, ১০:০৩ এএম

তালায় অতি পুরনো মাটির ঢিবি মন্দিরের রূপরেখা

তালায় অতি পুরনো মাটির ঢিবি মন্দিরের রূপরেখা
সাতক্ষীরা তালা গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুড়িঝাড়া নামক মাঠের মধ্যে কয়েক শত বছর আগের একটি মাটির ঢিবি- ছবি: জাগরণ

 

সাতক্ষীরা তালা উপজেলা সদর ইউনিয়নের আগোলঝাড়া, ডাঙ্গানলতা ও আটারই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুড়িঝাড়া নামক মাঠের মধ্যে কয়েক শত বছর আগের একটি মাটির ঢিবি রয়েছে। যেখানে ছেলে মেয়েরা বিকাল হলে বেড়াতে যেত বিনোদন করতো। এ স্থানটিকে এই অঞ্চলের একটি দর্শনীয় জায়গা বলে মনে করতো সাধারণ মানুষ। তবে আবার এক শ্রেণির মানুষ ওর পাশ দিয়ে যেতে ভয়ও পেতো।

২০১২ সালে পুরাকীর্তির সন্ধানে এলাকায় এসেছিল সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শাখা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। সেই থেকে অধিদফতরটি অফিসিয়াল কার্যক্রম শেষ করে সম্প্রতি এই পুরাকীর্তির সন্ধানে গত ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর তালা উপজেলা সদরে একটি শিবির স্থাপন করেন তারা। ৭ নভেম্বর খুলনা বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে ওই মাটির ঢিবি নিয়ে একটি কার্যক্রম শুরু করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে কার্যক্রমটি শুরু করে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পরিচালনা করে অধিদফতরটি। পরে শুরু হয় ওই স্থানে মাটি খোড়ার কাজ। মাটি খোড়ার পরে সেটি যেন দেখতে হয়েছে একটি অভূতপূর্ব। কয়েকমাস আগেও এলাকার মানুষ ভয়ে এই পুরাতন মাটির ঢিবিতে এবং তার পাশ দিয়ে হাটতে চাইতো না। সবাই জানতো ওখানে জ্বিনের বসবাস।

আজ সেটি উন্মুক্ত হওয়ায় বহুল আলোচিত এই ঝুড়িঝাড়া মাঠে পুরাতন মাটির ঢিবির এমন দৃশ্য এক পলক দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমাতে দেখা যাচ্ছে। মাঠের একপাশে বসেছে খাদ্য, কসমেটিক্স বাচ্চাদের খেলনাসহ বিভিন্ন প্রকৃতির দোকানপাঠ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই মাটির ঢিবিটি ছিল একশ’ ফুটের উর্দ্ধে উচু। যা শত শত বছর ধরে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নিচু হয়ে গেছে। এক সময় এর পাশ দিয়ে বিকালের পর কেউ যেতে সাহস পেতো না। সবাই জানতো এখানে জ্বিনের বসবাস। এলাকায় কাউকে জ্বিন আচর করলে হুজুররা রোগীর কাছে জানতে চাইতো কোথা থেকে এসেছিস। তখন বলতো ঝুড়িঝাড়ার মাটির ঢিবি থেকে। আজ সেটি সরকারি উদ্যোগে মাটি খুড়ে একটি সুন্দর নিদর্শন বেরিয়ে এসেছে।

এলাকার কেউ জানতো না এই মাটির ঢিবির মধ্যে এমন একটি সুন্দর নিদর্শন লুকিয়ে আছে। তবে এই নিদর্শন স্পটটির অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হলে এর পাশে রয়েছে অনেক খাস জমি। যেটি স্থানীয় কিছু লোকে দখল করে আছে। সরকার এই জমি দখল মুক্ত করে উন্মুক্ত করলে এলাকার জন্য হবে একটি সুন্দর যুগপোযোগী বিনোদন কেন্দ্র এবং সরকারের বাড়বে রাজস্ব আয়।

দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এর সীমানা বৃদ্ধি করে একটি দর্শনার্থী কেন্দ্র অথবা মিনি যাদুঘর নির্মান হলে একদিকে সরকার পাবে রাজস্ব এবং অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের বিনোদনের জন্য হবে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান।

খুলনা বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম জানান, মাটি খোড়ার পর এ পর্যন্ত এই স্থান থেকে ১টি ব্রিটিশ কয়েন, ৪টি পোড়া মাটির গুটিকা, ৭/৮টি পুড়া মাটির বিভিন্ন প্রকার পাথর খণ্ড, পাথরের থালার ভগ্নাংশ, নকশা করা নিট পাথরের টুকরা, পোড়া মাটির ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, ১২০০ সালের পূর্বের কোন একটি নিদর্শন এটি। যেটি প্রি-মুসলিম শাসন আমলের একটি নিদর্শন বলে তিনি ধারণা করছেন। এই পুরাকীর্তিটি একটি মন্দির কিন্তু সেটি বৌদ্ধ না হিন্দু ধর্মীয় মন্দির তা এখনও নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। এর আকার বর্গকার। যার কারণে কর্মকর্তারা মন্দির ভবন বলে দাবি করছেন। এই ভবনে ৩৩টি সেল রয়েছে। ভবনটি মাটি দ্বারা ইটের গাথুনি দেওয়া আছে। একটি ইটের আয়তন ২৬/২০/৬ সে.মি.। মেইন দেওয়াল চওড়া রয়েছে ২২৫ সে. মি. অর্থাৎ ৭ ফুট। ভবনটি বর্গাকার হওয়ায় দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ৮০/৮০ ফিট ধারণা করা হচ্ছে। তবে মাটি পূর্ণ সরানো হলে সঠিক মাপটি বেরিয়ে আসবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন হলে সীমানা বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণ বঙ্গের ইতিহাসে এটিই হবে একটি সুন্দর নিদর্শন ও বিনোদন কেন্দ্র।

এআর/টিএফ