• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২০, ০৩:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৪, ২০২১, ০৩:৩২ পিএম

ফেসবুক থেকে

মলাট কাহিনী

মলাট কাহিনী

স্কুল জীবনে নতুন ক্লাশে ওঠার পর বইয়ে মলাট লাগানোর কথা সবারই মনে থাকার কথা। আমরা যারা গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করেছি, তাদের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন রকমের। নতুন ক্লাশের নতুন বই, মলাট লাগানো.... এগুলো ছিলো উৎসবের মত।

পুরনো ক্যালেন্ডার/সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে নতুন ক্লাশের বইয়ে মলাট দেয়া, এখনোও স্মৃতির অংশ হয়ে আছে। যাদের নতুন বই কেনার সামর্থ্য ছিল, তাদের আনন্দটা ছিল ভিন্ন মাত্রার।

দুটি কারণে আমার কখনো স্কুল জীবনে নতুন বই পড়া হয়নি। প্রথমত: আমার আগের বোনটি আমার এক ক্লাশ উপরে পড়তো, পুরো স্কুল জীবন ওর পুরনো বই আমাকে পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয়ত: দারিদ্র্যের কারণে আমাদের বাবার সামর্থ্যই ছিলো না নতুন বই কিনে দেবার।

নতুন ক্লাশে ওঠার পর যখন দেখতাম,সহপাঠীরা নতুন চকচকা বই পড়ছে,তখন খুব লোভ হতো। আর সে কারণেই প্রায় কোমায় চলে যাওয়া, পুরনো বইগুলোকে খুব সুন্দর করে মলাট লাগিয়ে, বইয়ের ক্ষত আর নিজের মনের ক্ষত, দুটোই ঢেকে রাখতে রাখতেই স্কুল জীবন পাড় করেছি। অবশ্য শান্তি একটাই, পুরনো ছেড়া বই পড়েও, নতুন বই পড়া সহপাঠীদের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্লাশে প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম।

আসলে,ছাত্র হিসেবে তো খারাপ ছিলাম না! আজ যখন আমার ছেলে শুদ্ধ’র নতুন ক্লাশের নতুন বইতে, আদর করে মলাট লাগিয়ে দিচ্ছিলাম, তখন সত্যি উৎসব মনে হচ্ছিলো। ছোট বেলার এরকম অনেক ছোট ছোট অপ্রাপ্তিগুলো ভুলতে ভুলতেই আজ এখানে পৌঁছানো।

আমাদের সন্তানেরা যদি শুধু এটুকু বুঝতে পারতো যে, সারা জীবন ছেড়া বই পড়ে, তোমাদের বাবারা তোমাদের হাতে এক সেট নতুন বই তুলে দিতে পেরে নিজেদের অপ্রাপ্তির সব কষ্ট ভুলে যায়, তাহলে বোধ হয় ওরা সত্যিই মানুষ হবার প্রেরণা পেতো। তাহলে আমাদের জীবন সংগ্রামও সার্থক হতো।

এখনো আমি, আমার ছোটবেলার সেই নতুন বই পড়া সহপাঠীদের চেয়ে, ছেড়া বা পুরনো বই পড়া সহপাঠীদেরকেই বেশী খুঁজে বেড়াই। আর মনে মনে প্রার্থনা করি, আমাদের সন্তানেরা মানুষ হোক।

( বি: দ্র: আমাদের ছেলে শুদ্ধ, করোনা সময়ে শুধু অনলাইনে ক্লাশ করেই, চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উঠে গেল। আহারে অনলাইন... আবার যে কবে ওরা স্কুল জীবন শুরু করবে, সেই আশাতেই আছি ।)