• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০১৯, ০৮:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৮, ২০১৯, ০২:৩৬ এএম

জোড়া ব্রেন রাবেয়া-রোকেয়ার চূড়ান্ত অপারেশন জুন-জুলাইয়ে!

জোড়া ব্রেন রাবেয়া-রোকেয়ার চূড়ান্ত অপারেশন জুন-জুলাইয়ে!
জোড়া মস্তিষ্কের শিশু রাবেয়া-রোকেয়া - ছবি : জাগরণ

জোড়া মস্তিষ্কের ( ব্রেন) শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার চূড়ান্ত অপারেশন আগামী জুন-জুলাই মাসে হতে পারে। এই অপারেশনের আগের ধাপ মস্তিষ্কের চামড়া বাড়ানোর অপারেশন গত ৭ ফেব্রুয়ারি সফল হয়েছে।

গত ৪ জানুয়ারি থেকে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থিত সেইন্ট জোন্স হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ও মিলিটারি হাসপাতালে ৩২ মাস বয়সী রাবেয়া-রোকেয়ার এসব চিকিৎসা শুরু হয়।

তাদের চিকিৎসার সমন্বয়কারী শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, রাবেয়া-রোকেয়া এখন ভালো আছে। আগামী জুন-জুলাইয়ে চূড়ান্ত অপারেশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের একজন সিনিয়র চিকিৎসক জাগরণকে জানান, সম্প্রতি হাঙ্গেরি থেকে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে চামড়া বৃদ্ধির জন্য অপারেশন করে পরানো বেলুন মাঝেমাঝে পাম্প করা হচ্ছে। তারা ভালো আছেন।

গত ৪ জানুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম রাবেয়া-রোকেয়ার মা-বাবার হাতে হাঙ্গেরি যাওয়ার এয়ার-টিকিট তুলে দেন। সেদিন রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হাঙ্গেরির উদ্দেশে রওয়া দেয় রাবেয়া-রোকেয়া, তাদের ছয় বছরের বোন রাফিয়া, বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা তাসলিমা খাতুন।

হাঙ্গেরিতে তাদের চিকিৎসায় যুক্ত আছেন- হাঙ্গেরির ইন্টারভেনশন নিউরোলজিস্ট ইস্তাভান হুদাক ও নিউরোসার্জন অ্যান্ড্রু চকে। 

সামন্ত লাল সেন জানান, রাবেয়া-রোকেয়ার জোড়া মস্তিষ্ক আলাদা করার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ণ সহযোগিতায় রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসা চলছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এরইমধ্যে রাবেয়া-রোকেয়ার দুটি অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর যে অংশটি কেটে মস্তিষ্ক বা ব্রেন আলাদা করা হবে সেই অংশে কৃত্রিমভাবে চামড়া বাড়ানোর ধাপ শেষ হলো হাঙ্গেরিতে।

এই চিকিৎসায় সফলতার হার কতুটুক- এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন। পৃথিবীতে নজির নেই জোড়া মস্তিষ্ক বা ব্রেনের কাউকে আলাদা করার পর বেঁচে আছে। অনেকে ভাবছেন এটা জোড়া মাথা। তা সম্পূর্ণ ভুল। রাবেয়া-রোকেয়ার ব্রেন বা মস্তিষ্ক সংযুক্ত। ‘মাথা জোড়া’ হলে চিকিৎসায় সফল হওয়া অনেক সহজ ছিল।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ব্রেন আলাদা করার পর তারা যদিও বেঁচে থাকে, তাহলে শারীরিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাবে। জিনিসটা তো ব্রেন। আলাদা করার সময় একটা না একটা অঘটন ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। যেমন- প্যারালাইজড, মূত্রনালির সমস্যা সৃষ্টিসহ নানা ভয় আছে। পরবর্তীতে এটা ভালো করা অত্যন্ত দুরূহ। আমি ভয় পাচ্ছি এ বিষয়টা নিয়ে। যদি মারা যায় সেটা এক বিষয়। কিন্তু যদি কোনো সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকে, সেটা হবে ভয়াবহ কষ্টের।

প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রাবেয়া-রোকেয়ার প্রথম অপারেশন সম্পন্ন করেন চিকিৎসকরা। এ অপারেশনের মাধ্যমে নতুন একটি রক্তনালী সৃষ্টি করা হয়। অপারেশনের আগে একটি মাত্র রক্তনালী দিয়ে দুই মস্তিষ্ক বা ব্রেনে রক্ত পরিসঞ্চালন হতো। তাদের পূর্ণ সুস্থ করতে দুটি রক্তনালী অপরিহার্য ছিল।

দ্বিতীয় অপারেশন সম্পন্ন হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। এ সময় প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তাদের মাথায় বেলুন পরানো হয়। যার মাধ্যমে চামড়া বৃদ্ধি পায়। চূড়ান্ত অপারেশনের এটি একটি অন্যতম ধাপ ছিল। এই অপারেশনের জন্য ৩০ লাখ টাকারও বেশি ব্যয়ে চিকিৎসা-যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে কিনে আনা হয়।

হাঙ্গেরি ও জার্মানির চিকিৎসকদের নেতৃত্বে এই দুটি অপারেশন সম্পন্ন হয়।

২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাদের মা-বাবা চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন।

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনা সদরের একটি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে রাবেয়া-রোকেয়ার জন্ম। তাদের বয়স যখন ৫ দিন, তখন থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়। সেখানেও তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

আরএম/ এফসি