• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৭, ২০১৯, ১০:১০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৭, ২০১৯, ১০:১০ এএম

সাহ্‌রি-ইফতারে অধিক তেলযুক্ত ও অধিক মাত্রায় খাদ্য ক্ষতিকর

সাহ্‌রি-ইফতারে অধিক তেলযুক্ত ও অধিক মাত্রায় খাদ্য ক্ষতিকর

সাহ্‌রি ও ইফতারে অধিক তেলযুক্ত খাদ্য ও অধিক মাত্রায় খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস বর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার।

রোববার (৫ মে) দৈনিক জাগরণের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পবিত্র রমজান সংযমের মাস। এই মাসে যদি অপরিমিত খাদ্যাগ্রহণের আচরণ পরিবর্তন না করি, তাহলে কীভাবে হবে?

তিনি বলেন, রোজার আগে অনেকেই আমাদের বলেন, রোজার মাসে ওজন কমাবেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি রোজার পর যখন আমাদের কাছে আসেন, তখন দেখা যায়, ওজন তো কমেইনি বরং রোজার আগে যা ছিল, তা থেকে বেড়ে গেছে।

সাহ্‌রির সময় কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর- জানতে চাইলে পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার বলেন, এমন খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, যা পাকস্থলী সহজে গ্রহণ করতে পারে। এটা সাহ্‌রি ও ইফতার- দুক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সাহ্‌রির সময় রুটি বা ভাত, অল্প মাছ-মাংস, সবজি খাওয়াই যথেষ্ট। তবে জোর করে বেশি খাওয়া যাবে না বা এমন পরিমাণে খাওয়া যাবে না, যার ফলে পাকস্থলির উপর চাপ পড়ে। তাহলে পাকস্থলী হজম ক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারবে না। এতে রোজাদার শারীরিক অন্য সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। সাহ্‌রির খাবারে অধিক তেলের খাদ্য না রাখাই শ্রেয়। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সাহ্‌রির সময় ডায়াবেটিক রোগীরা ভাতের বদলে লাল আটার রুটি গ্রহণ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইফতারে উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে তিনি শুরুতেই বলেন, এই যে আমরা ভাজাপোড়া খাই, বেগুনি-পেঁয়াজু-আলুচপ, রান্না করা ছোলাবুটসহ বিভিন্ন আইটেম, এসব তেলের আইটেম গ্রহণ বাদ দিতে হবে। সারাদিন রোজা থাকার পর এসব খাদ্যগ্রহণ পাকস্থলী স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেবে।

পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার বলেন, ইফতারে খাদ্যগ্রহণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগ- যখন আমি রোজা ভাঙবো। এসময় শরবত, খেজুর, মৌসুমি ফলমূল গ্রহণ করা যেতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, স্থুলকায়জনিত সমস্যা আছে, তারা এই শরবত গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। কেননা, শরবতে চিনি থাকে, যেটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। তারা ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের জুস গ্রহণ করতে পারেন। এরপর নামাজ আদায় শেষে ইফতারের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করা যায়। এসময় দই-চিড়া, সবজি খিঁচুড়ি খাওয়া যায়, আলু চপ না রেখে ডিম চপ খাওয়া যায়। রান্না করা ছোলা যদি খেতেই হয়, সেটা খুব অল্প তেলে রান্না করে পেঁয়াজ-মরিচ-টমেটো কুচি দিয়ে মেখে খাওয়া যায়। এটা অনেক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। তরুণ-তরুণী ও শিশুরা ঘরে তৈরি মুখরোচক খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

জাহানারা আক্তার বলেন, দুই ভাগে ইফতার করলে পাকস্থলির উপর চাপ কম পড়ে, তা হজমের জন্য ভাল হবে। কোনোভাবেই একটানা বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করা করা উচিৎ নয়।

ইফতারির মেন্যুতে দই রাখার পরামর্শও দেন তিনি।

পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার বলেন, সারাদিন না খেয়ে থাকায় দেহে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। একবারে বেশি খাদ্য গ্রহণ করলে গ্লুকোজের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, ইফতারের পর রাত ১০টার দিকে রুটি বা ভাত, সবজি, অল্প মাছ-মাংস, একগ্লাস দুধ গ্রহণ করা যায়। পারলে ডিম ভর্তাও রাখা যেতে পারে। এসময়ও এমন পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ উচিৎ নয়, যার কারণে পাকস্থলিতে বাড়তি চাপ পড়ে। ডায়াবেটিস রোগীরা লাল আটার রুটি গ্রহণ করতে পারেন।

পানি পান প্রসঙ্গে এই পুষ্টিবিদের ভাষ্য- স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ পানি পান করা হয়, সেই পরিমাণ পানি ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্তই গ্রহণ করা যায়।

ইফতার ও সাহ্‌রি পার্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব আয়োজনে সবাই একসঙ্গে মিলিত হয়, সেটা ভাল। কিন্তু এই আয়োজনে যে অতিরিক্ত বেশি খাদ্য গ্রহণ করা হয়, এটা অস্বাস্থ্যকর। অনেক কিছুই খেতে ইচ্ছে করবে, কিন্তু আমাদের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে, এটা রমজান মাসেও করতে হবে।

আরএম/ এফসি