• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৯, ১০:৪১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২১, ২০১৯, ১০:৪১ এএম

অন্ধকারে রেফারাল পদ্ধতি

অন্ধকারে রেফারাল পদ্ধতি

রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে রেফারাল পদ্ধতি এখনও অন্ধকারে। কবে তা চালু হবে- এটাও জানেন না কেউ। রেফারাল পদ্ধতি চালু হলে রোগী ও চিকিৎসক- উভয়েই লাভবান হবেন। এতে সঠিক সেবা নিশ্চিত হবার পাশপাশি অর্থ ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে চিকিৎসকের মেধার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রেফারেল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা থেকে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ওই বছর রংপুর ও নীলফামারী জেলায় পাইলট প্রকল্প চালু করা এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি। তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার লাইন ডিরেক্টর ছিলেন অধ্যাপক শামিউল ইসলাম। 

তিনি বলেন, রংপুর ও নীলফামারী অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্নিষ্ট সবার সঙ্গেই তখন এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কেন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি তা জানি না।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে দেশে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সাব সেন্টার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন টারশিয়ারি ও বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসার জন্য সরাসরি ঢাকায় চলে আসছেন। অথচ প্রথমে তার কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার কথা। সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী যাওয়ার কথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর পর্যায়ক্রমে জেলা, বিভাগ এবং সবশেষে টারশিয়ারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসার কথা।

রেফারেল পদ্ধতির ওপর বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, সরকারি হাসপাতাল থেকে সরকারি হাসপাতালে, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সরকারি হাসপাতালে এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে পারেন। এটি দ্বারা যে রোগীর যেখানে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে, সেখানে পাঠানোর একটি ব্যবস্থাপনা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে রোগীরা নিজস্ব সিদ্ধান্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। যে সমস্যা মেডিকেল অফিসার দিয়ে সমাধান সম্ভব, সে সমস্যা সমাধানের জন্য যাওয়া হয় অধ্যাপকের কাছে। এতে রোগীর আর্থিক অপচয়, সময় নষ্ট ও ভোগান্তি হয়। আবার যে হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে রোগী যান, তাদেরও সময়ের অপচয় হয়। রেফারেল পদ্ধতিতে রোগী সরাসরি টারশিয়ারি হাসপাতাল এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে পারবেন না। রেফারাল পদ্ধতি না থাকায় বড় হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রোগীরা অযথাই ভিড় করছেন।

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক অধ্যাপক রশীদ-ই মাহবুব বলেন, রেফারেল সিস্টেম চালু না থাকায় যে রোগীর যাওয়ার দরকার মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে, সে রোগী যাচ্ছে নিউরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে, নাক-কান-গলার রোগী যাচ্ছে মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে। এতে রোগীর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, সময় নষ্ট হচ্ছে, হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে অপ্রয়োজনীয় ভিড় জমছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিন বলেন, ঢাকা মেডিকেলে কোনো রোগী এলে তাকে ফেরানো হয় না। শয্যা খালি না থাকলেও রোগীকে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। অনেক রোগী জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে এমনকি ঢাকার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে সরাসরি ঢাকা মেডিকেলে চলে আসেন। এতে বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। এমন ভিড় না থাকলে হয়তো আরও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরএম/একেএস/টিএফ