• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩১, ২০১৯, ০৪:১২ পিএম

অধিকাংশ ফার্মেসিতে অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ

অধিকাংশ ফার্মেসিতে অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ

দেশে এক লাখেরও বেশি ফার্মেসির অধিকাংশই নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করে না। এতে নষ্ট হচ্ছে ওষুধের মান। এর ফলে ওষুধের কার্যকারিতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বাধা, যেকোনো সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 
বুধবার (২৯ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার দৈনিক জাগরণকে বলেন, ওষুধের প্যাকেটে লেখা থাকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ছায়ায় ওষুধ সংরক্ষণের কথা। কিন্তু আমাদের দেশে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম বা বেশি। গ্রীষ্মকালে ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হয়ে যায়। এই অবস্থায় ওষুধগুলো যদি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে না রাখা হয়, তাহলে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের আগেই ওষুধ তার সঠিক কার্যকারিতা হারাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ সাধারণত তিন ধরনের তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নিয়ম। বায়োলজিক্যাল বা ভ্যাকসিন-জাতীয় ওষুধ ৪-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ রাখতে হয় ১২-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। কিছু ওষুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রা, ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা যায়। এর ব্যতিক্রম হলেই সমস্যা। কারখানায় মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন হলেও ‘তাপমাত্রা অনিয়ন্ত্রিত’ ফার্মেসি থেকে এসব ওষুধ সংগ্রহ করে রোগীরা মানসম্পন্ন ওষুধ গ্রহণ করতে পারছেন না। ফলে রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত হচ্ছে কি না, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ থেকেই যায়।

অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এ প্রতিবেদককে বলেন, রোগ নিরাময়ে ওষুধ কতটুকু কাজ করবে, সেটা নির্ভর করবে রোগীকে মানসম্পন্ন ওষুধ নিশ্চিত করা যাচ্ছে কি না, এর ওপর। কিন্তু আমাদের দেশে যে পরিবেশে ওষুধ সংরক্ষণ করে রোগীর হাতে দেয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কিছু ফার্মেসি মালিকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তার মধ্যে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে লাবণ্য ফার্মেসির বিক্রেতা বলেন, ইনসুলিন, ভ্যাকসিনসহ আরও কিছু ওষুধ তো ফ্রিজেই রাখা হয়। তবে, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেলফেই রাখা হয় বলে তিনি জানান; অথচ এসব রাখতে হয় ১২-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।

খিলগাঁওয়ে অবস্থিত নূর ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন ভূঁইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে আলো থেকে দূরে রাখুন, শুষ্ক স্থানে রাখুন- এসব নির্দেশনা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মানা হয়।

শ্যামলীর কাশেম ড্রাগসের স্বত্বাধিকারী এইচএম মজিদ চৌধুরীর কাছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন- সব ওষুধ কি ফ্রিজে ঢোকানো সম্ভব?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, মডেল ফার্মেসি ও মডেল ড্রাগ শপ বাদে সাধারণ যেসব কমিউনিটি ফার্মেসি আছে, সেসবের কোনোটিতেই সঠিক তাপমাত্রা মেনে ওষুধ সংরক্ষণ করা হয় বলে আমার মনে হয় না। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ফার্মেসিতে এসি থাকতে হয়। বায়োলজিক্যাল ওষুধের জন্য আলাদা ফ্রিজের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু আমাদের শহর ও গ্রামের অধিকাংশ ফার্মেসি এসব নিয়ম মেনে চলার মতন সামর্থ্য রাখে না।

আরএম/টিএফ