বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল অফিসার নিয়োগে সাময়িক স্থগিত করা মৌখিক পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে।
আগামী বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সিন্ডিকেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার (জনসংযোগ) প্রশান্ত কুমার মজুমদার।
মঙ্গলবার (১১জুন) সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে গেলে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের আন্দোলনের প্রভাবে মাত্র কয়েকজন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখলে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে থাকে। তখন মৌখিক পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা ভিসির কার্যালয়ের সামনে সিঁড়ি ও করিডোরে অবস্থান নিয়ে ভিসির রুম থেকে যাতায়াতের পথ আটকে রাখে। এসময় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা ভিসির কক্ষের সামনে করিডোরে বিক্ষোভ শুরু করেন।
মেডিকেল অফিসার নিয়োগে বেশ কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর গত ২২ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর বিভিন্ন ভবনে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় দুশ পদের বিপরীতে অংশ নেন ৮ হাজার ৫৫১ জন চিকিৎসক। গড়ে প্রতি পদের বিপরীতে অংশগ্রহণকারী ছিলেন ৪৩ জন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দুশ পদের মধ্যে ১৮০ জন এমবিবিএস চিকিৎসক এবং ২০ জন বিডিএস চিকিৎসক নেয়া হবে। পরীক্ষার ফল দুদিন পর ঘোষণার কথা থাকলেও তা না করে ১২ মে প্রকাশ করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ ৭২৯ জনের তালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনকারীরা বলছেন- লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও বিতর্কিত প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এমনকী ২২ মার্চ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ৪ দিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ কক্ষে প্রশ্নপত্র খোলা হয়। যেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা উপস্থিত ছিলেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর উল্লেখ থাকলেও বিদ্যুৎ কান্তি সূত্রধর নামে ৩৮ বছর বয়সের এক প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। তথ্য রয়েছে, তার সঙ্গে উপাচার্যের সখ্য রয়েছে আগে থেকেই। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, যেমন- উপাচার্যের সন্তান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের জামাতা, উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী-২ এর স্ত্রীসহ অনেকেই প্রথম সারিতে রয়েছেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে সংযুক্ত কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। অথচ সেটিই হয়েছে এবং তারাই তাদের স্বজনদের নিয়োগ আগে নিশ্চিত করেছেন।
নিয়োগ পরীক্ষার দিন মেডিকেলের পাশাপাশি একই প্রশ্নে ডেন্টাল পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ভিন্ন হওয়ার কথা। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ফলাফল প্রকাশের আগেই অনেক পরীক্ষার্থীর কাছে মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার রোল-নম্বরসহ একটি অনুলিপি পাওয়া যায়, যা সবার মনে ক্ষোভ ও শঙ্কা তৈরি করে। প্রকাশিত ফলাফলের সঙ্গে আগে পাওয়া সেই ফলাফলের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে অভিযোগ করলেও আমলে নেয়নি প্রশাসন। এছাড়া নিয়ম না থাকলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে উত্তর সরবরাহ করা হয়েছে।
পরীক্ষা বাতিল চেয়ে আন্দোলনকারীরা উচ্চ আদালতেরও শরণাপন্ন হয়েছেন।
আরএম/ এফসি