• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৮:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৯:২৫ পিএম

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছেই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বসে আছে ১৮ নিয়ে

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছেই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বসে আছে ১৮ নিয়ে

এ বছর ডেঙ্গুজ্বরের প্রভাবে প্রায় প্রতিদিনই একজন বা তার চেয়েও বেশি মৃত্যু হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী- দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা ৭০ এর বেশি। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বসে আছে ১৮ জনের মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে।

সর্বশেষ সোমবার (০৫ আগস্ট) ভোরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবহাওয়াবিদ নাজমুল হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৪) মৃত্যুবরণ করেন। ৪ আগস্ট স্কয়ার হাসপাতালে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন কোরেশীর স্ত্রীর, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে  ইডেন কলেজের ছাত্রী শান্তা আক্তার (২০), ঢাকা মেডিকেলে একজন তরুণী, অ্যাপোলো হাসপাতালে একজন গৃহবধূ ও খুলনায় একজন স্কুলছাত্র ও এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।

গত ৩ জুলাই স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নিগার নাহিদ দিপু, ২২ জুলাই রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় হবিগঞ্জের নবাগত সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেন হাজরা ও ২৬ জুলাই মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক তানিয়া সুলতানা। তিনি আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। একই দিন মুক্তিযোদ্ধা ডা. উইলিয়াম ম্রং। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

উইলিয়াম ম্রং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৯ম ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ সেক্টরের অধীনে ঢালু সাব-সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে অংশ নেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার চরবাঙ্গালিয়া।

এছাড়া চিকিৎসক রাশেদুজ্জামান, রোমানা আফরোজও মৃত্যুবরণ করেন।

এরকম আরও মৃত্যু আছে, যা ডেঙ্গুর প্রভাবে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বলে দিচ্ছে স্পষ্টভাবে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় এসব অনুপস্থিত।

কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত ডেঙ্গু বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। তিনি বলেছিলেন- যারা ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছেন বলা হয়, তাদের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরের অত্যাধুনিক ল্যাবে পরীক্ষা করে সত্যতা যাচাই করা হয়। সত্যতা মিলে গেলে অধিদপ্তরের হিসাবে উঠে। এসময় তিনি জানিয়েছিলেন- কিছু মৃত ব্যক্তির নমুনা এখনও পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে।

২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গণমাধ্যমের হিসাবে- এ বছর মৃতের সংখ্যাও গত ১৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

২০০০ সালে ৯৩ জন, ২০০২ সালে ৫৮ জন, ২০০১ সালে ৪৪ জন মারা যান ডেঙ্গুতে। তখন ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর এতোটা আধিপত্য ছিল না, যতটা হয়েছে এ বছর।

ডেঙ্গুর প্রভাবেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে এবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিভিউ কমিটি করেছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষার মধ্যমে এই কমিটি দেখে- আসলেই ডেঙ্গুতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে কি-না।

তবে এটা নিয়ে প্রবল আপত্তি আছে চিকিৎসকদের মাঝে। দৈনিক জাগরণ যেসব চিকিৎসকদের কাছ থেকে আপত্তিকর কথা শুনেছে, তারা কেউ আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে ইচ্ছুক নন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, আমরা ডেঙ্গু শনাক্ত করি নির্ধারিত ও স্বীকৃত পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে। এখন ডেঙ্গুরোগী যদি মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেই মৃত্যুকে তো ডেঙ্গুর প্রভাবেই মৃত্যুবরণ বলব। এটা আবার রিভিউ এর কী আছে? তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই রিভিউ কমিটি এসে চিকিৎসা প্রদান করুক।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, চিকিৎসকের কথা মেনেই মৃত ও আক্রান্তের তালিকা করা ভাল। এই যে রিভিউ করা হয়, এতে তো সময়-শ্রম নষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসকরা তো পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেই নিশ্চিত হন যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

আরএম/টিএফ

আরও পড়ুন