• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০১৯, ০৮:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২, ২০১৯, ০৮:১৭ পিএম

ঢামেকে টাকার বিনিময়ে মিলছে জাল সনদ

ঢামেকে টাকার বিনিময়ে মিলছে জাল সনদ
জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত আটক ঢাকেমের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আরিফুর রহমান

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জাল জালিয়াতের সিন্ডিকেট সক্রিয়। এ সিন্ডিকেটে রয়েছে হাসপাতাল কর্মচারীসহ ১০ জন সদস্য। তাদের কাছে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক, সার্জন রেজিষ্টার ও প্রশাসনিক ব্লকের কর্মকর্তাদের সীল ও প্যাড। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা রোগীর জখমি সনদপত্র মূল্যবান জীবন রক্ষাকারী ওষুধের অথরাইজড অফিসারের সীল ।শুধু তাই নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে তারাই জখমি রোগীর সেলাই থেকে শুরু করে প্রেসক্রিপসন ও সনদপত্র জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ জালিয়াতি চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
 
হাসপাতালের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন জানান, এ জালিয়াত চক্রের তৎপরতায় অসংখ্য জাল সনদপত্র আদালত থেকে হাসপাতালে তদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিমাসে রাজধানীসহ সারাদেশের আদালত থেকে জখমি সনদ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ঢাকা মেডিকেল, মির্টফোর্ড হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ সকল সনদের সিংহ ভাগ ভুয়া বা জাল হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত) রেকর্ড কীপার শেখ হান্নান জানান, জখমি রোগীর সনদ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রেকর্ড দেখতে গিয়ে এ সকল রোগীর কোন ফাইল পাওয়া যায়নি ষ্টোরে।
 
একটি চক্র হাসপাতাল কর্মচারীদের যোগ সাজশে জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগ ভিত্তিক শ্লিপ নিয়ে জাল সনদ তৈরি করে থাকে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে পুলিশ কেইসের সীল মেরে নিজেই লিখে দেন ইনজুরির বর্ণনা। 

এ সিন্ডিকেটে থাকা সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আরিফুর রহমান। তার সঙ্গে রয়েছে পারভেজ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, সুজন, আজাদ, মিজান, সুমন, শামীম, আলম, বাবু, লাভলু, রহিম, অলি ও হাবিব। হাসপাতালে একজন ওয়ার্ড মাষ্টার এ চক্রের জাল জালিয়াতির অর্থের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাদের টাকার ভাগ পাচ্ছেন ওই ওয়ার্ড মাষ্টার।
       
র‌্যাব ১০ এর কর্মকর্তা মেজর জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। তবে সেখানে ওয়ার্ডবয়সহ গড়ে ওঠা একটি জালিয়াত চক্র জাল ও ভুয়া মেডিকেল সনদ তৈরি এবং সরবরাহ করে আসছে। ছুটি, মেডিকেল লিভ কিংবা পুলিশি মামলায় ইনজুরি রিপোর্টের জন্য ভুয়া সনদ সরবরাহ করে আসছিল চক্রটি। সরবরাহ করা ভুয়া ও জাল সনদের বিপরীতে গুরুত্ব অনুযায়ী চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ঢামেক হাসপাতালের নার্সিং কলেজের ভেতরের গ্যারেজ থেকে হাতেনাতে জাল জন্ম-মৃত্যু সনদ, নকল সিল ও ইনজুরি সনদ, রাবার স্ট্যাম্পসহ মো. আরিফুর রহমান (৫০) নামে কর্মচারীকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

ওই কর্মকর্তা জানান, আটক আরিফ ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থের বিনিময়ে চক্রটি জাল সনদ তৈরি ও সরবরাহ করত। ঢামেক হাসপাতালের শুধু ওয়ার্ডবয় নয়, এ চক্রে আরও অনেকে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
  
মেজর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে মূলত জালিয়াতি চক্রটির কাছে বিভিন্ন জাল সনদ ও ইনজুরি সার্টিফিকেটের চাহিদা যায়। তারা মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই জাল সনদ সরবরাহ করে।

তিনি বলেন, পুলিশের যেকোনো মামলায় প্রতিবেদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ইনজুরি সনদ দরকার হয়, যা নরমালি একটা অফিসিয়াল সিস্টেমের মধ্যে হাসপাতাল থেকে পেতে হয় এবং তা সময়সাপেক্ষ। এ সুযোগটি নিয়ে দালাল চক্রটি অল্প সময়ের ব্যবধানে জালিয়াতি চক্রটির কাছ থেকে মেডিকেল লিভের জন্য মেডিকেল সনদ, ইনজুরি সনদ সরবরাহ করত। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরও তারা জাল করত।

মেজর জাহাঙ্গীর বলেন, মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে যেকোনো প্রয়োজনে মেডিকেল সনদ নিতে গেলে সত্যতা থাকতে হয়, সময়ও লাগে। কিন্তু এ চক্রটি কেউ মারধরের শিকার হয়নি, ইনজুরি হয়নি কিন্তু তার ইনজুরি সনদ দরকার, তাদের জাল ইনজুরি সনদ সরবরাহ করে আসছে। যার ওপর ভিত্তি করে অনেকে ভুতুরে মামলাও দায়ের করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এ জালিয়াতি করে আসছে। এ কারণে দুষ্টু লোকের দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলায় নিরীহ লোকজন কষ্ট পেতে হচ্ছে।
 
ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ এ চক্রের সঙ্গে জড়িত কি না? কারণ ইনজুরি সনদসহ মেডিকেল সনদ-সংক্রান্ত যেকোনো ডকুমেন্ট পেতে হলে রেজিস্টার্ড বুক ও সিরিয়াল মেইনটেইন করতে হয়, এমন প্রশ্নে মেজর জাহাঙ্গীর বলেন, ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনেকে জড়িত রয়েছে। তবে আটক মো. আরিফ ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে আরিফ জবানবন্দি দিয়েছে এবং সত্যতা শিকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধেও তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। 

এইচ এম/বিএস