• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০১৯, ০৮:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৩:২৪ এএম

পশ্চিমবঙ্গে মোদী-মমতার একে অপরকে ‌‘কচুকাটা’

পশ্চিমবঙ্গে মোদী-মমতার একে অপরকে ‌‘কচুকাটা’

 

শিলিগুড়ির পর কলকাতার ব্রিগেড ময়দানের সভা থেকেও একযোগে কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অপরদিকে কোচবিহারের দিনহাটায় সভা করতে এসে বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে রীতিমত কচুকাটা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুপুরে শিলিগুড়িতে মমতাকে ‌বাংলার উন্নয়নের পথে ‘স্পিড ব্রেকার’ বলার পর ব্রিগেড ময়দানে মোদীর আক্রমণের তীর ছিল কংগ্রেসের দিকে। সেখানে তিনি বলেন, তোষণের রাজনীতি করে বলে কংগ্রেস সব সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নরম অবস্থান নেয়। আর মোদীকে জবাব সভাতেই দেবেন এমন কথা রাখলেন মমতা। তিনি বলেছেন, “মোদী আর এখন প্রধানমন্ত্রী নন। উনি এখন এক্সপায়ারিবাবু।”

ব্রিগেডে কংগ্রেসের ইস্তেহারকে হাতিয়ার করেন মোদী। ইস্তেহার পত্রে কয়েকটি আইন তুলে দেওয়ার কথা বলেছে কংগ্রেস। সেনাবাহিনীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া থেকে শুরু করে  আরও কিছু বিষয় সেখানে আছে। একথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, কংগ্রেস এমন কথা বলছে যাতে আতঙ্কবাদীদের সুবিধা হবে, পাকিস্তান খুশি হবে। আর যারা কংগ্রেস থেকে ভেঙে বেরিয়েছেন তারাও রাজনৈতিক জমি হারাচ্ছেন বলে দেশ বিরোধী কথা বলছেন। মোদীর কটাক্ষ, মে মাসের ২৩ তারিখের পর কংগ্রেসও থাকবে না ওদের ইস্তেহারও থাকবে না। গত জানুয়ারি মাসে হয়ে  যাওয়া তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশকে নিশানা করে মোদী বলেন, “আলাদা আলাদা রাজ্য থেকে নেতারা এসে বললেন মোদী হাটাও। কেন বললেন? মোদীর কী দোষ? গরিবের মাথায় ছাদ দেওয়া অন্যায় হল সেই অন্যায় আমি করেছি।”

কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মোদী বলেন, “খুব কম, সময়ের মধ্যেই সভার আয়োজন হয়েছে। তবু এত ভিড়! ২৩ মে কী হবে সেটা বঙ্গ ভূমির এই ভিড় দেখেই রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বুঝতে পারবেন। বাংলা বিপ্লব আর কবিতার জায়গা। এখান থেকেই নতুন দেশ গড়ার কাজ শুরু হবে। ব্রিগেডে এত বড় সভা আগে কখনও হয়নি। কথা দিচ্ছি যে ভালবাসা আপনারা দিচ্ছেন তা উন্নয়ন করে ফিরিয়ে দেব। বাংলার প্রতিটি কোণ থেকে সমর্থন পেয়েছি। ভারতের জয়জয়াকার হচ্ছে, ভারত যা করার স্বপ্ন দেখত এখন সেটাই হচ্ছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন ভারত তৈরির কাজ হচ্ছে।”

বিরোধীদের উদ্দেশে মোদী বলেন, কারা সন্ত্রাসবাদীদের দেহ দেখতে চেয়েছিল? বীরদের থেকে প্রমাণ চেয়েছিল কারা? এটা নিহত সেনাদের অপমান। ২০১৯ সালের ভোটে নতুন ভারত তৈরি হবে আশা প্রকাশ করে মোদী বলেন, “স্বামী বিবেকানন্দর দেখান পথে চললে অন্য জায়গায় চলে যেত। কিন্তু তার জায়গায় ৫৫ বছর ধরে পরিবারতন্ত্র চলেছে। আমি এর বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করেছি।”

আর দিনহাটার সভায় উপস্থিত কয়েক হাজার জনতার সামনে দাঁড়িয়ে মমতা একের পর এক তোপ দাগেন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। মোদীকে কটাক্ষ করে বলেন তিনি, “হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল? সাহারার টাকা কোথায় গেল? চোরের মায়ের বড় গলা! আপনাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছি। আপনার মত মিথ্যে কথা বলি না। কুৎসা করি না। লজ্জা করে না! আপনার রাজত্বে ভারতবর্ষে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে!” ভারতীয় জন পার্টিকে নিশানা করে মমতা আরও বলেন, “বিজেপি অপরাধীদের টিকিট দেয়, লুটেরাদের টিকিট দেয়, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের টিকিট দেয়।”

জনতার উচ্ছ্বসিত স্লোগান ও হাততালির মধ্যেই তিনি বলতে থাকেন, “আহা হা! কোচবিহার নাকি দখল করে নেবে! মামদোবাজি! আরে বাংলা তো পরে! আগে তো দিল্লির ইলেকশন! সেটা আগে জিতুক! অপদার্থের দল, বিনাশকারী দল, তাণ্ডবকারীর দল, ডাকাতের দল, গো-রক্ষাকারীর দল তোমরা আমাদের শেখাবে?! দিল্লি বাংলাকে পথ দেখায় না! বাংলাই বাংলাকে পথ দেখায়!” তিনি বলেন, “বিজেপি জিতলে আর কোনও গণতন্ত্র থাকবে না দেশে। মনে রাখবেন। ওরা দেশকে কিন্তু জবরদখল করে নেবে!”

কোচবিহারের দিনহাটায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজের সরকারের কাজ নিয়েও একাধিক কথা বলেন মমতা। তিনি বলেন, তৃণমূল সরকারের আমলেই এসেছে বিনামূল্যে ওষুধ। কোচবিহারের বাসিন্দাদের উদ্দেশে তার আরও বক্তব্য যে, বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহলের জমি নিয়ে সমস্ত সমস্যা মিটিয়েছি আমরাই। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়েও মোদী তথা সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। বলেন, ‍“চিটফান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম তদন্ত শুরু করি আমরা। সব কাগজপত্র আছে আমার কাছে। বড় বড় কথা বলছেন মোদী! অাসামের ডেপুটি সিপিএম কত টাকা নিয়েছিল সারদা থেকে?”

তিনি মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রেখে বলেন, “একটা লোক নিজেকে কী ভাবে ভগবান জানে! নিজের নামে সিনেমা বের করছে। নিজের নামে টি-শার্ট বের করছে। প্যান্টুল বিক্রি করছে!” কয়েকদিন আগেই অমিত শাহ দাবি করেন, বাংলায় জিতলে এনআরসি চালু করবেন। সেই দাবির বিরুদ্ধে রীতিমত বোমা ফাটিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর জবাব, “আবার বলছে, বাংলায় এসে এনআরসি করবে! ওরে ৪২টা আসনের মধ্যে একটা আসনে জিতে দেখা আগে! তারপর ওই বড় বড় কথা শুনব!”

প্রসঙ্গত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিশেষ নজর দিয়েছেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে ২৩টিতে জেতার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে পদ্মশিবির। জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী নেতৃত্বের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এবারের ভোটে মোদীর অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ মমতাই। আর সেকারণেই মমতাকে টক্কর দিতে এবং বাংলায় আধিপত্য বাড়াতে মোদী উঠেপড়ে লেগেছেন বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারীদের একাংশ।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপেস, এনডিটিভি

এসজেড