• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৯, ০৫:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১০, ২০১৯, ০৬:৩৬ পিএম

‘আহত বাঘ কিন্তু বেশি ভয়ঙ্কর’

‘আহত বাঘ কিন্তু বেশি ভয়ঙ্কর’

 

‘‘আমার সরকার ভাঙার চক্রান্ত করা হচ্ছে’’, বিজেপির দিকে ইঙ্গিত করেই গুরুতর অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মমতার তাৎপর্যপূর্ণ হুঁশিয়ারি, ‘‘আহত বাঘ কিন্তু বেশি ভয়ঙ্কর’’। সোমবার (১০ জুন) প্রশাসনিক বৈঠক শেষে সাংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, ‘‘আমার সরকার ভাঙার চক্রান্ত করে যদি বিজেপির লোকেরা মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ বন্ধ করবেন, তাহলে মনে রাখবেন, আহত বাঘ কিন্তু বেশি ভয়ঙ্কর…।’’ পাশাপাশি সাম্প্রতিক গোলযোগেরও পেছনে ‘চক্রান্ত’ রয়েছে বলেও দাবি তৃণমূল সুপ্রিমোর।

বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যের পরই মুকুল রায়, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের হাত ধরে তৃণমূলে ‘ভাঙন’ ধরেছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একঝাঁক কাউন্সিলর ‘নজিরবিহীন’ভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে মুকুল রায়দের হুমকি, ‘‘এরপর (তৃণমূল) বিধায়কদের লাইন পড়ে যাবে (বিজেপিতে)।’’ অর্জুন সিং-এর পর বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলামও পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। এছাড়া, সৌমিত্র খান, অনুপম হাজরাদের মতো সাংসদরা তো আগেই পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়দের হুমকি, এ সরকার আর বেশি দিন নেই। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনই এখন কার্যত পাখির চোখ বিজেপি নেতৃত্বের। এই নির্বাচনে মমতা সরকারকে সরাতে মরিয়া গেরুয়াবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে মমতার মুখে এদিনের হুঁশিয়ারি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

বিজেপিকে নিশানা করে মমতা আরও বলেন, ‘‘ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ভুয়ো খবর রটানো হচ্ছে। অনেক খেলা হয়েছে। এখন অ্যাডভাইজরি পাঠানো হচ্ছে। গণতন্ত্র বিক্রি হয় না। কোনওরকম ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবে না বাংলা। সবাইকে বলছি, শান্তি বজায় রাখুন।’’ লোকসভা ভোটের ফলের প্রসঙ্গ টেনে মমতা ফের বলেন, ‘‘সিপিএমের সব ভোট কী করে বিজেপিতে গেল? এটা হয় কখনও? সবটাই গেমপ্ল্যান হচ্ছে। যত দিন যাবে বিজেপির মুখোশ খুলে যাবে।’’

এদিন ২০০৯ সালের পরিস্থিতির তুলনা টেনে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘২০০৯ সালের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। ২০০৯ সালে ২৬টি আসন পেয়েও আমরা কিছু করিনি।’’ উল্লেখ্য, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ঢেউয়েই বাংলায় ৩৪ বছরের বাম দুর্গকে টলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের উত্থান ঘটেছিল। সেই পরিস্থিতির সঙ্গেই এবার উনিশের নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির উত্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের তুলনা টানছেন অনেকে। আর তাই মমতার এদিনের এমন মন্তব্যও রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।

‘‘কেন্দ্রীয় সরকার দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। আগুন নিয়ে খেলবেন না…রাজ্যে যদি অশান্তি হয়, তার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না কেন্দ্র’’, সন্দেশখালিতে হিংসার ঘটনার ২ দিন পর এ ভাষাতেই বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদ সম্মেলনে সন্দেশখালির ঘটনার সরাসরি উল্লেখ না করে মমতা বলেন, ‘‘এখানে যেটুকু গোলমাল হচ্ছে তা বিজেপি জেতার পর থেকে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উস্কানিতেই এসব হচ্ছে।’’ এ ঘটনার পিছনে বড় ‘গেমপ্ল্যান’ রয়েছে বলেই দাবি মমতার।

সন্দেশখালির ঘটনায় মমতা বলেন, ‘‘২ জন মারা গেছে, অথচ বলা হচ্ছে ৫ জন। এক বিজেপি নেতা বলছেন ৩ জন নিখোঁজ। রিপোর্ট কোথায়? যা বলছে, মিথ্যা বলছে। বাংলাকে অপমান করবেন না। বাংলা এত শান্তিতে আছে যে আজও বাংলায় রাতে মেয়েরা ঘুরে বেড়াতে পারে।’’ বাংলায় গুণ্ডামি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলেও সাফ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশকে আরও কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। কয়েকজন ওসি দায়িত্ব পালন করছেন না, কয়েকজন সাব-ইন্সপেক্টর কাজ করছেন না। আমরা খতিয়ে দেখছি। কারা কারা এসবে মদত দিচ্ছে, দেখা হচ্ছে। কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলা গুজরাত নয়।’’

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এসজেড