পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছো? লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যকলাপ দেখে তেমনটাই বলছেন আম-বাঙালি।
ইভিএম
লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণা হল। দেখা গেল, দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি হওয়া।মমতা তবু বলেছেন, ইভিএম-এ বিশেষ প্রোগ্রামিং করে বিজেপি এত আসন পেয়েছে। ইভিএম-কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটের আগে সব বিরোধী দল ভিভিপ্যাট গণনার দাবি তুলেছিল।তখন সুপ্রিমকোর্ট বলেছিল, প্রতি বিধানসভা এলাকায় নমুনা হিসাবে ৫টি করে ভিভিপ্যাট গণনা হবে। উদ্দেশ্য, ওই ৫টি ভিভিপ্যাট যে বুথে ছিল, তার ইভিএম-এর সঙ্গে ভোট মিলিয়ে দেখা। দেখা গেল, দশের ৪০ হাজার ভিভিপ্যাট গণনা করে কোনও অমিল পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই নিয়ে মুখ না খুললেও মমতা ষড়যন্ত্রের কথা বলেই চলেছেন।
জয় শ্রীরাম
বিজেপি দলের স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’। যা মমতার দৌলতে এখন রাজ্যে হিট। সম্প্রতি তার যাত্রাপথে কয়েকজন এই স্লোগান দিলে গাড়ি থেকে নেমে তাদের দিকে তেড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাদের ধমকান, শাসান। এই ঘটনার পর এখন মমতা যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই একদল রাস্তায় জড়ো হয়ে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন আচরণে রীতিমত মজা পেয়ে কয়েক হাজার জয় শ্রীরাম লেখা পোস্টকার্ডও পৌঁছে গিয়েছে তার বাড়ির ঠিকানায়। সোস্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে বিস্তর হাসি-ঠাট্টা-মস্করা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী তবু অবিচল। একাহ্নেই না থেমে দলকে নির্দেশ দিয়েছেন জয় হিন্দ, জয় বাংলা স্লোগান দিতে। একটা নন ইস্যুকে ইস্যুকে করে বাংলায় এখন স্লোগান যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সৌজন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বখাটেদের কাজ
রাজ্যে শিল্প নেই। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার বেকার। অনেকে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন চাকরির আশায়। এই পরিস্থিতিতে বখাটে ছেলে-মেয়েদের দলে এনে কাজ দেয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা বিপর্যয়ের পর মমতাকে অনেকবার বলতে শোনা গেছে। দলে প্রচুর ভুল-ভাল লোক ঢুকে পড়েছে। তারা বেরিয়ে গেলেই তিনি খুশি হন। দলও পবিত্র হয়। নতুন করে দলকে সাজাতে তার দাওয়াই। বখাটেদের দলে আনা হোক। তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। বাংলায় বখাটে বললে একটা খারাপ ধারণা তৈরি হয়। সেই ছেলে-পুলেদের দলে এনে কাজ দেবেন দলটি। এ কথা শুনে শাসক দলেই তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ কী বললেন নেত্রী ! মমতা অবশ্য নির্বিকার তার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে।
জুনিয়র ডাক্তার
ওরা বহিরাগত, ওরা রোগীর পদবি দেখে চিকিৎসা করেন। যে রাজ্যে ৫ দিন ধরে গোটা স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙ্গে পড়েছে, রাজ্যের সব প্রান্তের ডাক্তাররা কর্ম-বিরতিতে সামিল হয়েছেন, আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়েছে অন্যান্য রাজ্যেও, সেই আন্দোলনের পুরোধারা বহিরাগত, পদবি দেখে চিকিত্সা করেন? সন্দেহ নেই, মানবিক হওয়ার বদলে তার এই বক্তব্য আগুনে ঘি ঢেলেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই আচরণ মমতার? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের আগে ভালো সংখ্যক আসন নিয়ে সংসদে যাবেন বলে নিশ্চিত ছিলেন নেত্রী। এবং তার কাছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগও আসতে পারে। এমন এক সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে গেরুয়া বাহিনী। তার চেনা গড়ে পদ্মফুল ফুটেছে। এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না মমতা। তাই ধৈর্য হারাচ্ছেন, সংযম হারাচ্ছেন, এলোমেলো আচরণ করছেন। অন্যদিকে তার হাতে তৈরি মুকুল রায় এখন দল ভাঙ্গানোর কাজে নেমেছেন, যা মেনে নিতে পারছেন না নেত্রী। একটা খারাপ ফলাফল দল ও প্রশাসনে সংশয়, অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করেছে।
অনেকের মতে, যত দিন যাচ্ছে, এই মমতা যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছেন। মুখ খুললেই সেই অচেনা মমতা ধারা পড়ে যাচ্ছেন।
ভিএসজি/এসএমএম