• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০১৯, ০১:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৩০, ২০১৯, ০১:০৮ পিএম

“জয় শ্রীরাম” না বললে তবরেজ হতে হবে!

“জয় শ্রীরাম” না বললে তবরেজ হতে হবে!
তবরেজ আনসারী

ঘটনা এক) ভারতের ঝারখণ্ডের সরাইকেলা-খরসোয়া জেলার ধক্তিদি গ্রামে মোটরবাইক চোর সন্দেহে তবরেজ আনসারী নামে এক যুবককে ১৮ ঘন্টা ধরে পেটায় একদল লোক।   ভিডিওতে দেখা গেছে, বেধড়ক মারতে মারতে ল্যাম্পপোস্টে বাঁধা ওই যুবককে তারা “জয় শ্রীরাম”, “জয় হনুমান” বলতে বলছে। অত্যাচারে কাহিল হয়ে তবরেজ জ্ঞান হারালে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে চার দিন পর মারা যায় ২৪ বছরের তবরেজ. গোটা দেশে আলোড়ন ফেলে দেওয়া এই ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হলেও এর দায় স্বীকার করেনি বিজেপি।

ঘটনা দুই) বছর বাইশের কিশোর মসজিদে নমাজ পরে বাড়ি ফিরছিল। পরনে ফেজ টুপি, পাজামা-পাঞ্জাবি। পথে তাকে আটকায় একদল লোক। মাথা থেকে ফেজ টুপিটা খুলে নিয়ে কিশোরকে জয় শ্রীরাম বলতে শাসায়। ছেলেটি ইতস্তত করে এবার আস্ফালন দ্বিগুন হয়, শুরু হয় গণধোলাই। শেষে রক্তাক্ত কিশোরকে স্থানীয় লোকজন তুলে নিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাস্থল কানপুরের কিদওয়াই নগর, যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য। ছেলেটির নাম মো. তাজ। পুলিশকে সে বলেছে, জোর করে জয় শ্রীরাম বলতে বলেছে।   রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে। কিদওয়াই নগরের ঘটনার কয়েকদিন আগে কানপুরেরই বরেলি টাউন-এ একই কারণে এক কিশোরের জামাকাপড় খুলে মারধোর করা হয়।  

ঘটনা তিন) পেশায় মাদ্রাসা শিক্ষক, নাম শাহরুফ হালদার। বাড়ি  দক্ষিন ২৪ পরগনার বাসন্তির চুনাখালী। ২০ জুন আপ ক্যানিং-শিয়ালদাহ লোকালে করে যাচ্ছিলেন মেটিয়াবুরুজের দিকে। ট্রেন তালদি স্টেশনে ঢুকতেই হিন্দু সংহতি নাম একটি সংগঠনের কর্মীরা ট্রেনে উঠে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে শুরু করে। তারা ওই শিক্ষককে ধ্বনি দিতে বললে তিনি রাজি হননি। এবার শুরু হয় মারধোর, একসময় তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে ছুঁড়ে ফেলা হয়।    

ঘটনা চার) মাত্র দিন কয়েক আগে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। তাতে দেখা যায়, এক মাঝ বয়সী মুসলিম ব্যক্তিকে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছে কয়েকজন। তাদের হুঙ্কার, বল জয় শ্রীরাম। মমতার নাম মুখেও আনবি না। তৃণমূলের লোকেদের সঙ্গে দেখলে বুকের কলজে ছিড়ে আনব। তারপর কয়েক ঘা কষিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। ঘটনাস্থল উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ এলাকা।  

বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা। কিন্তু দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এবারের লোকসভা ভোট সবাইকে অবাক করে দিয়ে নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহের দল একাই ৩০০-এর বেশি আসন পেয়েছে। তারপর থেকে বিভিন্ন সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী রাজনীতি, ভারতের ঐতিহ্যবাহী বহুত্ত্ববাদের ধারণা, গণতন্ত্রের কথা বলছেন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় প্রতিদিন গেরুয়া বাহিনীর আস্ফালন নেমে আসছে বিশেষত সংখ্যালঘুদের উপর। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের দিকেই এগোচ্ছে শাসকেরা?

জয় শ্রীরাম শুধু মাঠে-ময়দানে, রাস্তাঘাটে নয়, এই গেরুয়া জোশের ঝলক দেখা গিয়েছে সংসদের ভিতরেও। নজির ভেঙ্গে এবারে বিজেপির অনেক সাংসদ শপথবাক্য পথ করার পর সংসদের ভিতর জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়েছেন। কেউ তাদের বারণ করেননি।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ম যার যার নিজের। ধর্ম পালনেও কাউকে জোর করা যায় না। ভারতের মত নানা ভাষা নানা মত-এর দেশে নানা ধর্মের মানুষ রয়েছেন। প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে এদের সকালের একসঙ্গে থাকার অধিকার আছে। জয় শ্রীরাম বা জয় হনুমান বলতে বাধ্য করার অর্থ দেশে অন্য কোনো ধর্মের অস্তিত্ব মানতে চায় না বিজেপি। তাই এই সংগঠিত আক্রমন নেমে আসছে।