• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০১৯, ০২:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৫, ২০১৯, ০২:৪৪ পিএম

শেষ মুহূর্তে বাতিল ভারতের ‘চন্দ্রযান ২’ অভিযান

শেষ মুহূর্তে বাতিল ভারতের ‘চন্দ্রযান ২’ অভিযান

 

উৎক্ষেপণের অল্প কিছুক্ষণ আগে যান্ত্রিক সমস্যার জন্য ভারতের ‘চন্দ্রযান ২’ নির্দিষ্ট সময়ে পাড়ি দিতে পারল না মহাকাশের দিকে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়ে দিয়েছে যান্ত্রিক সমস্যাই এই বাধার কারণ।

সোমবার (১৫ জুলাই) স্থানীয় সময় ভোর রাত ২টা ৫১ মিনিটে চাঁদের অদেখা অংশের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও, কাউন্টডাউন শেষ হওয়ার ঠিক ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে এই যান্ত্রিক সমস্যা নজরে আসে। যার ফলে তখনই নেওয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। ইসরোর তরফ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, “মাত্র ৫৬ মিনিট আগে চোখে পড়ে ‘চন্দ্রযান ২’-এ কিছু যান্ত্রিক সমস্যা আছে। সেই কারণেই ‘চন্দ্রযান ২’ আজ পাড়ি দিতে পাচ্ছে না মহাকাশের দিকে। নতুন তারিখ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।”

এ সময় উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন। পরে যদিও দেশটির স্পেস রিসার্চ সেন্টারের (ইসরো) পক্ষ  টুইট করে জানানো হয়, ‘লঞ্চিং -এর মাত্র এক ঘন্টা আগে একটি যান্ত্রিক সমস্যা নজরে আসে। আজ চন্দ্রযান ২-এর মহাকাশের পথে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যান্ত্রিক সমস্যার জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না। উৎক্ষেপণের পরবর্তী তারিখ খুব শিগগিরই জানানো হবে।’

এর আগে চন্দ্রযান ২ -এর জানুয়ারি মাসেই মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরে তা পিছিয়ে ১৫ জুলাই করা হয়েছিল। ইসরোর প্রধান কে সিভান জানিয়েছেন লঞ্চিং উইন্ডোর কিছু যান্ত্রিক মানদণ্ড সম্পূর্ণ করতে হয়, যার ফলে নতুন তারিখ ঘোষণা হতে সপ্তাহ বা মাসও লেগে যেতে পারে। বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও গবেষক জানিয়েছেন, চন্দ্রযান ২ নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে না পারায় সকলেই একটু হতাশ, কিন্তু সঠিক সময়ে সমস্যাটি চোখে পড়ে যাওয়াতে খুবই ভালো হয়েছে। আসা করা হচ্ছে শিগগিরই নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।   

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরো চাঁদে নতুন অভিযানের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। যেখানে অভিযানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘চন্দ্রযান-২’ নামে নতুন স্যাটেলাইট। যানটি চাঁদে অবতরণ করতে পারলে এটি হতো বিশ্বের চতুর্থ কোনো দেশের সফলভাবে চন্দ্র অভিযান। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) সফলভাবে অভিযানটি সম্পন্ন করেছিল।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ন মহাকাশ কেন্দ্র (এসডিএসসি) থেকে ভোর রাত ২টো ৫১ মিনিটে অত্যন্ত শক্তিশালী, সর্বাধুনিক ‘জিএসএলভি মার্ক-৩-এম-ওয়ান’ রকেটে চেপে ‘চন্দ্রযান-২’-এর যাত্রা করার কথা ছিল। এই ৩৮৫০ কিলোগ্রাম ওজনের অন্তরীক্ষ যানটির সঙ্গে একটি ‘অরবিটার’; যা চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথে থেকে প্রদক্ষিণ করবে। তাছাড়া এতে আরও থাকবে একটি বিক্রম নামের ল্যান্ডর ও প্রজ্ঞান নামের একটি রোভারও। যা চন্দ্র পৃষ্ঠের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াবে। ৯৭৮ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত চন্দ্রযান ২ -এর চাঁদে পৌঁছাতে ৫৪ দিন সময় লাগত।

ইসরো জানায়, ১৫ কোটি ডলারে নির্মিত ‘চন্দ্রযান-২’ চাঁদ থেকে পানি, খনিজ ও পাথর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। উৎক্ষেপণের প্রায় দেড় মাস পর সেপ্টেম্বরে (৫ তারিখ গভীর রাত ও ৬ তারিখ ভোর রাতের মধ্যে) চাঁদের পিঠে পা ছোঁয়াবে ল্যান্ডর 'বিক্রম'। নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ল্যান্ডর থেকে বেরিয়ে আসবে খুবই ছোট একটি রোভার 'প্রজ্ঞান'। যার ওজন মাত্র ২০ কিলোগ্রাম। আর চন্দ্রযান-২-এর সার্বিক ওজন ৩ হাজার ৮৫০ কিলোগ্রাম। ল্যান্ডরটি নেমে আসার সময় চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারটি চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে থাকবে মাত্র ১০০ কিলোমিটার ওপরে।

ভারতের ‘চন্দ্রযান-২’ পাঠানোর উদ্দেশ্য, চাঁদের পিঠের বালুকণায় মিশে রয়েছে কোন কোন মৌল ও খনিজ পদার্থ আর তা কী পরিমাণে রয়েছে তা জানা। সেই মৌল বা খনিজগুলো নিষ্কাশনের যোগ্য কি না, তা যাচাই করা। যে স্বপ্নটা প্রথম দেখেছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম।

বিজ্ঞানীদের মতে, দক্ষিণ মেরুর দিকেই চাঁদের গভীরে এখনো বয়ে চলেছে পানির ধারা। উল্কাপাত বা অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়ায় সেখানে একটি বিশাল গর্ত (ক্রেটার) তৈরি হয়েছে। এর ফলে চাঁদের গভীরে মৌল বা খনিজ বা পানির খোঁজের কাজটা সহজতর হয়ে উঠতে পারে। এর আগে ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন চাঁদের কক্ষপথে গিয়েছিল 'চন্দ্রযান-১'। চাঁদে পানির অন্যতম উপাদান হাইড্রক্সিল আয়নের খোঁজ দিয়েছিল যানটি।

সূত্র : এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এসজেড

 

 

আরও পড়ুন