• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯, ১১:৫৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯, ১১:৫৭ এএম

এনআরসির চূড়ান্ত তালিকার প্রথম বলি ফয়জুর রহমান

এনআরসির চূড়ান্ত তালিকার প্রথম বলি ফয়জুর রহমান
ফয়জুর রহমান -ছবি : আনন্দবাজার পত্রিকা

এনআরসিতে নাম নেই। শনিবার (৩১ আগস্ট) খবরটা পেয়েই থমকে গিয়েছিলেন করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরের ফয়জুর রহমান। সারাদিন কথাবার্তা প্রায় বন্ধই ছিল। মুখে তোলেননি খাবার। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রোববার ভোরে মিলল মৃতদেহ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ বছরের প্রৌঢ়ের। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এনআরসির প্রথম বলি। আনন্দবাজার 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে কেনা জমির দলিল দিয়েছিলেন নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে। কিন্তু পরিবারের ৭ জনের কারও নাম আসেনি। এনআরসি তালিকা প্রকাশের আগেই শঙ্কায় আত্মঘাতী হয়েছেন শোণিতপুরের শায়েরা বেগমও।

যে আসাম আন্দোলনের ফলশ্রুতি এই এনআরসি, সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯৮৩ সালে মারা যান ডালিমবাড়ির যুবক মদন মল্লিক। আসু তাকে ‘জাতীয় শহিদ’-এর স্বীকৃতি দেয়। সরকার পরিবারকে দেয় স্মারক ও পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু তার স্ত্রী সর্ববালা দেবী ও পরিবারকে ডি-ভোটার করে দিয়েছে আসাম পুলিশ। আসুই ভুল করে ‘মল্লিক’ পদবিকে ‘সরকার’ লিখেছিল। কাল হল সেটাই। মদনবাবুর স্ত্রী-পুত্র-সহ পরিবারের ১৩ জনের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে।

দেশভাগের সময় আসামকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মরিগাঁওয়ের লাহরিঘাটের মৌলবি মহম্মদ আমিরুদ্দিন। নগাঁও মহমেডান ইস্ট কেন্দ্র থেকে জেতা নির্দল বিধায়ক আমিরুদ্দিন ছিলেন আসাম বিধানসভার প্রথম ডেপুটি স্পিকার (১৯৩-১৯৪৬)। মুসলিম লিগের প্রিমিয়ার সৈয়দ মহম্মদ শাহদুল্লার বিপক্ষে গিয়ে আসামকে ভারতে রাখার ক্ষেত্রে গোপীনাথ বরদলৈয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন আমিরুদ্দিন। কিন্তু তার পরিবারের ১০০ জনের নামে পুলিশ সন্দেহজনক নাগরিকের নোটিস দেয়। ৭০ জনের নাম এনআরসিতে ওঠেনি। 

প্রাক্তন আসু নেতা বরপেটার নবকুমার দাসের স্ত্রী সবিতা দাসের নামও তালিকায় নেই। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা গোপালকৃষ্ণ দাসের বাবা রঞ্জিৎ দাস ২২ বছর বিএসএফে ছিলেন। বাবা-ছেলে কারও নামই তালিকায় নেই। ইটাখোলার মলো দে অবসরপ্রাপ্ত সেচ দফতরের কর্মী। আসাম মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র সামসুদ্দিনের কন্যা তথা লাহরিঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক আবদুল জলিলের স্ত্রী নিশাদ বেগমও তালিকাছুট। এমনকি ‘অরিজিন্যাল ইনহ্যাবিট্যান্ট’ ডবকার প্রদীপ বরার পরিবারের ৬ জন, সুকুমার বরদলৈ ও মলানি বরদলৈ, বকুল এলাকায় কার্বি সম্প্রদায়ের জেনিমাই, বড়োভূমিতে অনেক বড়ো পরিবারের নাম, বেশ কিছু রাভা পরিবারও তালিকাছুট। প্রায় এক লাখ গোর্খা তালিকায় বাদ পড়েছেন বলে গোর্খা সংগঠনের দাবি।

কামরূপ মহানগর জেলার মধ্যে পড়া সোনাপুর সার্কলে পূর্ব মালয়বাড়ি গ্রামে ২০০০ লোকের মধ্যে দেড় হাজারের নামই বাদ পড়েছে। যার করা মামলার জেরে এনআরসি নবীকরণ সেই ৮৫ বছর বয়সি, খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী প্রদীপ ভুঁইয়ার দাবি, বাদ পড়া ১৯ লাখকে অবিলম্বে ডি-ভোটার ঘোষণা করা হোক। অন্তত ৬০ লাখ মানুষের নাম ঢোকেনি। তারা এনআরসিতে আবেদনও জানাননি।

এসএমএম