• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০১৯, ০৫:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২১, ২০১৯, ০৫:৪৩ পিএম

সিএবি-এনআরসি বিতর্ক

টানা ১৪ দিনের আন্দোলনে ঝরে গেল ২০ প্রাণ

টানা ১৪ দিনের আন্দোলনে ঝরে গেল ২০ প্রাণ

দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো দেশটিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে, যা দমনের চেষ্টা করছে দেশটির প্রশাসন। ভারতে সদ্য পাশ পাওয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ভারতীয় পুলিশ। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২০ জন নিহত হলো।  বিবিসি বাংলা

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মেঙ্গালুরু ও লক্ষ্ণৌতে পুলিশের গুলিতে ৩ বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনায় তাঁতিয়ে উঠেছে চলমান পরিস্থিতি। এর ৬ দিন আগে আসামে নিহত হন ৩ জন।

শুক্রবার দেশটির উত্তর প্রদশে শুরু হওয়া বিক্ষোভকালীন সহিংসতায়  শুরুতে ৯ ব্যক্তি নিহতের খবর পাওয়া গেলেও শনিবার নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে ১৪ জনে দাঁড়ায়। এই মিলিয়ে নিহত মোট বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ৩০ জনে গিয়ে ঠেকলো।   দৈনিক আজকাল

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) উত্তর প্রদেশে চলমান বিক্ষোভের ইস্যুতে সে রাজ্যের পুলিশ প্রধান ওপি সিং রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, এ সময় আরো অন্তত ৩২জন আহত হয়েছে। উত্তর প্রদেশের স্থানীয় চিকিৎসা কর্মী এবং পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অনেকের শরীরে বুলেটের ক্ষত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার এই রায়ের বিরুদ্ধে সকল প্রকার বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার পর থেকে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা অনেক স্থানে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। 

তবে রাজ্য পুলিশের প্রধান দাবি করেছেন, তার পুলিশ কর্মকর্তাদের গুলিতে শুক্রবার কেউ হতাহত হয়নি।  শুক্রবার উত্তর প্রদেশের অন্তত ১০টি জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যম।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সেখানেও সহিংসতার পর অনেক বিক্ষোভকারীর মাথা থেকে রক্ত ঝড়তে দেখা গেছে। এ সময় একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান আর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। অনেক স্থানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে এই আইনটি ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অনুমোদনের পরই ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে বিশেষ করে আসামে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা বলছে, এই আইন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের প্রতি 'পক্ষপাতমূলক'। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী আনা হয়েছে এই বিলের মাধ্যমে।

এতে বলা হয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ সহ আরও কিছু অমুসলিম ধর্মাবলম্বীরা, যারা নিজের দেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে, তারা যদি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে ভারতে প্রবেশ করে থাকে, তবে তারা এই আইনের আওতায় ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপযুক্ত।

এসব সম্প্রদায়ের মানুষজন ভারতে ছয় বছর বসবাসের পর সেখানকার নাগরিকত্ব পাবেন যা আগে ছিল এগারো বছর। তাদের কোন কাগজপত্র না থাকলেও চলবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের আগে এখনকার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এটি। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বিলটি পার্লামেন্টের একটি কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এর পর গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের লোকসভায় সেটি নিয়ে আলোচনা হয়।

যে কারণে বিলটি নিয়ে এত বিরোধিতা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু জাতিভিত্তিক সংস্থা এর বিরোধিতা করে আসছে। তারা মনে করে এসব অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিলে সেটি স্থানীয় মানুষদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

আসামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আশঙ্কা বাংলাভাষী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিলে তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে।

বিলটির প্রতিবাদ করে আসছে শিক্ষার্থীদের সংগঠন, 'নর্থ ইষ্ট স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন'। তাদের নেতা প্রিতমবাই, সোনাম সেন্টিনাল কাগজকে বলেছিলেন, "বিলটি আদিবাসীদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।"

ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস সহ বেশিরভাগ বিরোধীদল মনে করে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দিলে তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভীতকে দুর্বল করবে।

এসকে