• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০১৯, ১১:২৭ এএম

সাত দিনের মধ্যে করতোয়া দখলমুক্ত করার নির্দেশ

সাত দিনের মধ্যে করতোয়া দখলমুক্ত করার নির্দেশ

 

এক সময়ের বহমান খরস্রোতা নদী করতোয়ার বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। উৎস মুখে জলকপাটের কারণে অনেক আগেই করতোয়া তার নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এই সুযোগে পাল্লা দিয়ে চলছে নদীর জায়গা দখল ও পানিদূষণের প্রতিযোগিতা। নদীর উপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন অঞ্চলের একাধিক পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলো।

অবশেষে আগামী ৭দিনের মধ্যে করতোয়া নদীর অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে দখলদারদের নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বগুড়া পৌরসভাসহ ৩০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আলীমূন রাজীব।

তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে ৩০ জনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও করতোয়া নদী দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে নোটিশ অনুসারে স্থাপনা না সরালে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখা থেকে গত সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পাঠানো এই নোটিশে ৭ দিনের মধ্যে নদীর সীমানা থেকে অবৈধ স্থাপনা নিজ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ের পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সেসব স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হবে বলেও নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। 

সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা বগুড়া শহর ও শহরতলির বিভিন্ন অংশে করতোয়া নদী দখলকারী ৩৮ জনের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছিল। এই তালিকা প্রকাশের দাবি তোলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) বেশ কিছু সংগঠন। 

প্রতিবেদনে করতোয়া নদীর ৩টি অংশে দখলের কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন মহিষাবান মৌজায় প্রায় ১৫ বিঘা আয়তনের নদীর জায়গা অবৈধ ভাবে দখল ও মাটি ভরাট করে ছাত্রাবাস ও ক্যান্টিন নির্মাণ এবং নদীর জায়গা পুকুর হিসেবে ব্যবহার করার কথাও উল্লেখ করা হয়। 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে টিএমএসএস মহিলা মার্কেটের পূর্ব পাশে সূত্রাপুর মৌজার করতোয়ার নদীর পশ্চিম তীর ভরাট করে টিএমএসএস অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। করতোয়া নদী ১১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বগুড়া শহরের ভেতরে দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ আড়াআড়ি ভাবে প্রবাহিত। আগে মূল করতোয়া নদীর সঙ্গে করতোয়ার সরাসরি সংযোগ ছিল। এখন উৎসমুখে জলকপাটের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে করতোয়ার পানিপ্রবাহ। 

সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তমাল হোসেন জানান, টিএমএসএসের বিরুদ্ধে করতোয়া নদীর একাধিক স্থান দখল, ভরাট ও নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের প্রমাণ মিলেছে। এরইমধ্যে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের পেছনে মহিষাবান মৌজায় ৪ দশমিক ৯০ একর নদীর জায়গা দখল করে ছাত্রাবাস, ক্যান্টিনসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের প্রমাণ মিলেছে। 

টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, সরকারের কাছে থেকে ইজারা নিয়ে করতোয়া নদীপারের জায়গায় তিনি টিএমএসএস ছাত্রাবাস ও ক্যান্টিন নির্মাণ করেছেন। নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতেই পরিকল্পিত ভাবে বালু তোলা হচ্ছে। 

পরিবেশ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক আশরাফুজ্জামান বলেন, বিসিএল পেপার মিলের ইটিপি বন্ধ রেখে বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা হলে তা তদন্ত করে টিএমএসএসের বিরুদ্ধে মালতিনগর ভাটকান্দি সেতু-সংলগ্ন এলাকায় নদী দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ ও পানির পাম্প স্থাপন এবং কালেক্টরেট স্কুল-সংলগ্ন স্থানে নদীর জায়গা ভরাট করে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কথা সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মেদ জানান, নদী কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক নদী দখলদারের তালিকা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান বলেন, নদীপাড়ের জায়গা খালি ছিল বলে সেখানে স্থপনা নির্মাণ করেছে পৌরসভা। প্রশাসনের নোটিশ পেলে অবৈধ স্থপনা সরিয়ে নেয়া হবে।

কেএইচ/ এএস