• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০১৯, ০৪:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৬, ২০১৯, ০৫:০২ পিএম

ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার 

ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার 
ওসি মোয়াজ্জেম

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

রোববার (১৬ জুন) বেলা সাড়ে ৩টায় হা্ইকোর্ট  এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি সোহেল রানা। তিনি বলেন, তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। 

এ বিষয়ে পুলিশের এডিসি আজিম উদ্দীন দৈনিক জাগরণকে বলেন, এর আগে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার দেবিদ্বার,  দাউদকান্দি তার শ্বশুর বাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে পুলিশ ফোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন, শনিবার দিবাগত রাতে মোয়াজ্জেম রাজধানীর কল্যাণপুরে তার এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। এ খবরে সোনাগাজী ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যৌথভাবে কল্যাণপুরের বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানের কিছুক্ষণ আগে টের পেয়ে মোয়াজ্জেম পালিয়ে যান। পরবর্তীতে হাইকোর্টের এক আইনজীবীর মাধ্যমে জানতে পারেন আইনজীবী সালমা ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে হাইকোর্টে আসেন। এ খবরে পুলিশ  কোর্ট এলাকায় অবস্থান নেন। পরে আদালত থেকে বের হয়ে আসলে  তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেন।

ওসি মোয়াজ্জেমের এক কাছের আত্মীয় খায়রুল ইসলাম মিনহাজ দৈনিক জাগরণকে জানান, রোববার দুপুরে আইনজীবী সালমা ইসলামের মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেন ওসি মোয়াজ্জেম। আদালত তার আবেদনটি গ্রহণ করে  আগামীকাল সোমবার শুনানির জন্য ধার্য্য করেন।  আদালত থেকে বের হওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। 

এ বিষয়ে এডিসি আজিম জানান, ওসি মোয়াজ্জেম আমাদের হেফাজতে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আলোচনা সাপেক্ষে তাকে আদালতে নেয়া হবে। 

গত ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তে প্রতিটি অভিযোগের সত্যতা পায় পিআইবি। 

মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে করা মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তার সব কটির সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআইপ্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, অভিযোগপত্রে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, গত ২৭ মার্চ রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে রাফিকে থানায় ডেকে নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করার সময় রাফির বক্তব্য ভিডিও করেন তিনি। এ সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে রাফি ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন রাফি।

ওসি যখন ভিডিও করছিলেন, তখন রাফি তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। ওই সময় ওসি আপত্তি করে বলেন, ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও।’ এ সময় তিনি রাফিকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’ ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, ওসি মোয়াজ্জেম আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করছিলেন রাফিকে। পরবর্তী সময়ে ওসির মোবাইল থেকে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রাফিকে হেনস্তা করেও ক্ষান্ত হননি। রাফির গায়ে দুর্বৃত্তরা কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে তিনি আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছিলেন। এ কাজে এসআই ইকবাল হোসেন ওসিকে সহায়তা করেন। এ ঘটনায় ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। এদিকে রাফি হত্যার ঘটনায় ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম সরকারেরও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি। তাকেও বদলি করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। বোরকা পরিহিত কয়েকজন কৌশলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ রাফি। এর আগে ২৭ মার্চ রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পর দিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ পর্যন্ত রাফি হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ২২ জনের মধ্যে সিরাজউদ্দৌলাসহ ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এইচএম/বিএস