• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯, ১১:০১ এএম

২ বছরেও শুরু হয়নি সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার

২ বছরেও শুরু হয়নি সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার
সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল। ফাইল ছবি।

 

দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার বিচার শুরু হয়নি দুই বছরেও। ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল।

আলোচিত এ হত্যা মামলার দুই বছর পার হলেও শুরু হয়নি বিচার কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জই গঠন করা হয়নি। দফায় দফায় পরিবর্তিত হচ্ছে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ।

এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রধান আসামি পৌরসভার মেয়র (সাময়িক বহিষ্কৃত) হালিমুল হক মীরুসহ অন্যান্য আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে তিন মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। পরে মামলাটি শাহজাদপুর আমলি আদালত থেকে জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর অতিরিক্ত জেলা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্বজন এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিতে জোর দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো সে দাবি পূরণ হয়নি।

সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা জজ (দ্বিতীয়) আদালতের সরকারি সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট শামসুল হক বলেন, মামলার প্রধান আসামি মীরু কারাগারে অসুস্থতার কথা বলে বিগত তারিখে আদালতে হাজির না হওয়ায় চার্জ গঠনের শুনানি হয়নি। আসামি অনুপস্থিত থাকার কারণে বার বার পিছিয়েছে চার্জ গঠনের শুনানির তারিখ। ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বলেন, গত দুই বছরেও আমার স্বামী হত্যার বিচার না হওয়ায় উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। মামলার প্রধান আসামি শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মীরু দুই বছর ধরে কারাগারে থাকলেও তার সহোদর হাবিবুল হক মিন্টুসহ চার্জশিটভুক্ত বাকি ৩৭ আসামি জামিনে মুক্ত আছেন। মীরুকেও জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। প্রধান আসামি মীরু জামিনে মুক্ত হলে আমরা হয়তো আর বিচারই পাব না।

তবে মেয়র মীরুর ছোট ভাই হাবিবুল হক পিন্টুসহ আসামিপক্ষের দাবি, সাংবাদিক শিমুল হত্যার ঘটনাটিকে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দুই বছর ধরে কারাবন্দি রয়েছেন নির্দোষ মেয়র হালিমুল হক মীরু।

হাবিবুল হক পিন্টু বলেন, মেয়রের বাড়িতে হামলা ও সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক শিমুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আমাদের পক্ষেরও ৪জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কারা হামলা করেছে, কাদের গুলিতে শিমুলসহ অন্যান্যরা গুলিবিদ্ধ হলো সুষ্ঠু তদন্তে  সে রহস্য উদঘাটন হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুণ্ডু বলেন, সংবাদকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু আজও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আসেনি। অবিলম্বে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে বিচার কার্যক্রম শুরুর দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মেয়র হালিমুল হক মীরুর বাড়ির সামনে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক শিমুল। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেয়ার পথে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বাদী হয়ে মেয়র হালিমুল হক মীরু, তার ভাই হাবিবুল হক মিন্টুসহ ১৮জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২২ জনের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ২ মে শাহজাদপুর আমলি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। তবে দেড় বছরেও অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়নি।


সাইসে