• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০১৯, ০৮:৩৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৭, ২০১৯, ০৮:৩৪ এএম

নেত্রকোনায় আজও অরক্ষিত ডজন খানেক বধ্যভূমি

নেত্রকোনায় আজও অরক্ষিত ডজন খানেক বধ্যভূমি

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও অরক্ষিত ও অবহেলায় পড়ে আছে নেত্রকোনার ১৪টি বধ্যভূমি। এসবে নেয়া হয়নি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ। অরক্ষিত বধ্যভূমিগুলোতে নির্মাণ করা হয়নি কোন স্মৃতিফলক। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারায় দেশের অনেক পরিবর্তন হলেও নেত্রকোনার বধ্যভূমিগুলোর কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাসহ অনেকেই।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ইতিহাসবিদ ও শহীদ পরিবারেরর সঙ্গে কথা বলে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছোট-বড় ১৬টি বধ্যভূমির সন্ধান জানা গেছে। 
এগুলো হচ্ছে- জেলা শহরের মোক্তারপাড়া সেতু সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর, সাতপাই সড়ক সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর, নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়কের ত্রিমোহনী সেতু, জেলা শহরের চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর, সদর উপজেলার চল্লিশা রেল সেতু, পূর্বধলা উপজেলার পুকুরিয়াকান্দা, জারিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন কংস নদীর তীর, রাজপাড়া গ্রামের ডা. হেম বাগচীর বাড়ি, দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি গ্রাম সংলগ্ন সোমেশ্বরী নদীর তীর, গাওকান্দিয়া, কেন্দুয়া উপজেলার ঘোড়াইল, ধূপাগাতি, সেনের বাজার ও কেন্দুয়া বাজার, কলমাকান্দার নাজিরপুর ও রামপুর বাজার। এর মধ্যে জেলা শহরের মোক্তারপাড়া সেতু সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর ও সাতপাই এলাকায় একই নদী তীরে দু’টি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হয়েছে। বাকি ১৪টি বধ্যভূমি সম্পূর্ণ অরক্ষিত। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এলাকার আলবদর ও রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী বাহিনী নিরীহ ও মুক্তিকামী অসংখ্য বাঙালিকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে এসব বধ্যভূমিতে ফেলে রাখত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা অসংখ্য মা-বোনকে ধরে নিয়ে এসব স্থানে নির্যাতনের পর হত্যা করত। অগণিত শহীদের রক্তে ভেজা এসব মাটি। সংরক্ষণের অভাবে চিহ্নগুলো মুছে যেতে বসেছে। অনেকেই এসব স্থান অবৈধ দখলের পাঁয়তারা করছে। অযত্নে আর অবহেলায় এসব স্থান পড়ে থাকলেও তা সংস্কারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনও উদ্যোগ। জাতীয় দিবসগুলো আসলে কিছু কিছু বধ্যভূমির কদর বাড়লেও সারা বছরই এগুলো থাকে অযত্নে আর অবহেলায়।

স্মৃতিফলক নির্মিত না হওয়ায় নেত্রকোনার এসব বধ্যভূমির অধিকাংশই হারিয়ে যেতে বসেছে। সেগুলো চিহ্নিত করে এখনই স্মৃতিফলক নির্মাণ দাবি জানায় নেত্রকোনাবাসী।

নেত্রকোনা সদরের মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান জানান, ৭১’র ২২ সেপ্টেম্বর পূর্বধলার ত্রিমোহিনীতে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। সেদিন হানাদাররা সুরেশ সাহা, সতীস সরকার, স্বদেশ দত্তসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৫ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমিগুলো পড়ে আছে অযত্নে আর অবহেলায়।

জেলার সব কটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ এগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী।  

নেত্রকোনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার এতো বছরেও কেন বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি তা আসলে অবাক করার মত বিষয়’। আমি চাই এসব স্থানে শহীদদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণ করুক প্রশাসন।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, এখানকার অরক্ষিত কোন বধ্যভূমির অস্তিত্বের কথা এত দিন কেউ তাকে জানাননি। তবে, এখন তিনি এসবের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলেও জানান তিনি।

কেএসটি