• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৮:৫৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৯:০২ এএম

এই ‍দিনে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে তুলে নিয়ে যায় রাজাকাররা

এই ‍দিনে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে তুলে নিয়ে যায় রাজাকাররা
শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন

আজ ১০ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের এই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক সিরাজুদ্দীনকে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা চামেলীবাগের বাড়ি তুলে নিয়ে যায়। এরপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে যখন একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই পরাজয় নিশ্চিত জেনে ওই রাষ্ট্রকে মেধাশূন্য করতে তৎপর হয় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দালাল আলবদর বাহিনী। শুরু হয় বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ। 

মূলত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনার সঙ্গেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ও পরিকল্পনা করা হয়। পাক সেনারা অপারেশন চলাকালে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে।  যুদ্ধ শেষ হবার মাত্র কয়েকদিন আগে পরিকল্পিত এ হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। বিজয় যখন সন্নিকটে ঠিক সেই মুহূর্তে ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশার প্রথম শিকার হন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন।

তিনি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক। ব্রিটিশ আমলের শেষভাগ থেকে শুরু করে তার সাংবাদিকতা জীবন স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত ব্যপ্ত। এই পুরো সময়ে দেশের সকল আন্দোলনের সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তিনি তার ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে অসাধারণ দক্ষতায় সংবাদপত্রের পাতায় এ দেশের বঞ্চিত মানুষের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন।

সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি বেতারে প্রচারের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের নামে ছাপিয়ে দেন ইত্তেফাকে, কারণ তখন কোন নেতাকে টেলিফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না।  সাংবাদিকতার প্রচলিত রীতি লঙ্ঘন করে ইত্তেফাকে তোফায়েল আহমদের নামে উল্লিখিত বিবৃতিটি প্রকাশের ব্যবস্থা না করলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি আদৌ রেডিওতে প্রচারিত হতো কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ আছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সিরাজুদ্দীন হোসেন ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’ নামে একটি উপ-সম্পাদকীয় লেখেন যেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যে দোষে শেখ মুজিবকে দোষী বলা হচ্ছে, পশ্চিমা রাজনীতিকরা সেই একই দোষে দুষ্ট। এ সময় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম-এ ‘অতএব ঠগ বাছিও না’ নামে একটি উপ সম্পাদকীয় লিখে তাকে পরোক্ষভাবে মৃত্যুর হুমকি দেয়। কিন্তু এসব হুমকি তার কলমকে থেমে রাখতে পারেনি ৷ ১৯৫২ সালে দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক থাকা অবস্থায় মহান ভাষা আন্দোলনের স্বপক্ষে তার সাংবাদিকতা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে  অসাধারণ কীর্তি বলে পরিগণিত। শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন এদেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের অন্যতম পথিকৃৎ। 

ইত্তেফাকে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ফলে ১৯৬২ সালে ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ের কুখ্যাত ছেলে ধরার দল ধরা পড়ে। মুক্তি পায় ৭২ জন শিশু। সিরাজুদ্দীন হোসেন ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সটিটিউট অ্যাওয়ার্ডের (আইপিআই) মনোনয়ন লাভ করেন। আইপিআই বুলেটিনেও তার এই সাফল্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন তত্কালীন সানডে টাইমস ও পরবর্তীতে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক হ্যারল্ড ইভান্স।

শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনের অসাধারণ শিরোনাম বাঙালি জাতির রক্তে আগুন ধরিয়ে দিত। ‘চিনিল কেমনে’, ‘সুকুইজ্জা কডে’, ‘জয় বাংলার জয়’, ‘অবশেষে বাংলার ভাগ্যাকাশ হইতে বাস্তিলের কারাগার ধসিয়া পড়িয়াছে, জনতার জয় হইয়াছে’, ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’ এবং দুই পাকিস্তানের ভারসাম্যহীনতাকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করে যে শিরোনাম করেছেন, তা পাঠককে বিষয়ের গভীরে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

ব্যক্তিগত জীবনে শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন ৮ পুত্র সন্তানের জনক। তিনি ছিলেন বিনয়ী, সদালাপী, পরোপকারী এবং সজ্জন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার স্ত্রীর নাম নূরজাহান সিরাজী। তাদের ছেলে জাহিদ রেজানূর এবং শাহীন রেজানূরও সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত রয়েছেন।

জেডএইচ/একেএস