• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০১৯, ১০:৪৯ এএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাস্কমেলন চাষে বিপুল সম্ভাবনা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাস্কমেলন চাষে বিপুল সম্ভাবনা
মাস্কমেলন


আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া মাস্কমেলন ফলের চাষ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। মাঠপর্যায়ে গবেষণায় ইতিমধ্যেই দেশে অর্থকরী এ ফলটির চাষাবাদের উপযোগিতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের আশা, বাংলাদেশে এই ফল চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ফলটি কৃষকদের জন্য লাভজনক ও সম্ভাবনাময় হবে বলে মনে করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে অভিযোজনে সফলতা পেয়েছেন এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

জানা গেছে, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ড. মাহবুবুর রহমান প্রায় এক দশক জাপানে ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় কিছু মাস্কমেলনের বীজ নিয়ে আসেন। তিন বছর গবেষণা করে বাংলাদেশের মাটিতে এই ফল উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেন ড. মাহবুবুর রহমান। তিনি এই ফলটি বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজাবাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন। মাস্কমেলন কিউকারবিটেসি পরিবারের বাঙ্গী জাতীয় একটি ফল। এটি জালিকার ত্বকযুক্ত গোলাকার ফল, যার ওজন ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম হয়ে থাকে। বীজ রোপণের ১১০-১৩০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এ ফলের প্রায় ৩০০টি জাত রয়েছে। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয়। আমাদের দেশীয় চাষাবাদকৃত বাঙ্গী থেকে অনেক সুস্বাদু।

মাস্কমেলনে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফাইবার গ্লুকোজ থাকায় রক্তের সাথে মিশে না। ফাইবার সমৃদ্ধ শর্করা থাকায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এ ফল ডায়াবেটিক রোগীর জন্য উপকারী। চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগীদের খেতে কোনো বাধা নেই। ফলটি রক্তচাপ ও রক্তে গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্বাদু এ ফলটি একই সঙ্গে ভিটামিন এ, বি এবং সি সমৃদ্ধ। ফলে দৃষ্টিশক্তি ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতি ১০০ মিলি’তে ক্যালোরি রয়েছে ৫৩ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন ১ গ্রাম, ডাইটারি ফাইবার ১ গ্রাম, সোডিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪১৭ মিলিগ্রাম, ক্যারোটেনরেড ৩২.১৯ মাইক্রোগ্রাম।

গবেষক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে হলে আরও গবেষণা প্রয়োজন। আমি মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যেই প্রজেক্ট সাবমিট করেছি। যদি অনুমোদন হয়, তবে গবেষণার পথ সুগম হবে। বাংলাদেশে এ ফলের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আমাদের দেশে বাঙ্গী প্রজাতি রয়েছে, সেগুলো কম সুস্বাদু এবং মানুষ কম খায়। এ ফলের চাষ লাভজনক হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি। এটি চাষ করে ভিটামিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মাত্র এক বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৫ মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

তিনি বলেন, অনেকে অভিযোজনের চেষ্টা করেছে, সফল হয়নি। আমরা বরেন্দ্র অঞ্চলে অভিযোজনে সফলতা পেয়েছি। এখন দেশীয় জাতের সাথে মিশ্রণ ঘটিয়ে গবেষণা করব। দেশীয় জাতের তুলনায় স্বাদ, পুষ্টি বেশি এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে ফলটি জনপ্রিয় হওয়া সম্ভব। বরেন্দ্র অঞ্চলসহ বাংলাদেশের সর্বত্র বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করার জন্য গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবিএম রাশেদুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে এ ফল রপ্তানি করাও সম্ভব হবে। যা থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে এবং জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

জেহ/টিএফ