• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০১৯, ০১:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৩, ২০১৯, ০৭:৩৫ পিএম

বাংলাদেশ জুটমিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা

বাংলাদেশ জুটমিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা

মজুরিসহ ৯ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল শিল্প এলাকার বাংলাদেশ জুট মিলের উৎপাদন। সোমবার (১৩ মে) ভোর ৬টা থেকে এ মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। 

সোমবার ভোরে মিলের নোটিশ বোর্ডে বাংলাদেশ জুট মিলের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক নোটিশ টানিয়ে মিলের উৎপাদন বন্ধ করা হয়। নোটিশে  জানানো হয়, বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের সরকার কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর রোয়েদাদ বাস্তবায়ন, সকল বকেয়া মজুরি, বেতন প্রদানসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সোমবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মিলের উৎপাদন বন্ধ থাকবে। ধর্মঘট পালনসহ প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এদিকে, ১১ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে শ্রমিকদের মজুরি এবং তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন। এতে মিলের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সকালে ধর্মঘট শুরু করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মিলের তিন হাজার শ্রমিক। এ সময় মিলের প্রধান ফটকের সামনে মিলের সিবিএ সভাপতি ইউসুফ সরদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ নন-সিবিএ সম্মিলিত পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও বাংলাদেশ জুটমিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান, সিবিএ সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সাহেব আলী, যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
 
বক্তারা শ্রমিকদের প্রস্তাবিত মজুরি বাস্তবায়ন, শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের গ্রাচ্যুইটি টাকা ও পাট ক্রয়ের টাকাসহ ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানান।

অপরদিকে, মিলের ফিনিশিং বিভাগের শ্রমিক রাশেদ, কারিগরি বিভাগের শ্রমিক আনোয়ার হোসেন, ওয়ার্কশপ বিভাগের শ্রমিক কবির হোসেন জানান, ১১ সপ্তাহ ধরে আমাদের মজুরি না দেয়ায় অতি কষ্টে জীবনযাপন করছি। পরিবার পরিজন নিয়ে কোন মতে সেহরি খেয়ে-না-খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে আমাদের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শ্রমিকরা জানান, বাজারের কোন দোকানদারও আর আমাদের বাকি দিচ্ছে না। অথচ আমরা মজুরি না পেয়েও মিলের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছিলাম।

মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইউসুফ আলী জানান, ৫২০ তাঁতের এই জুট মিলটিতে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এক সময় বাংলাদেশ জুট মিলটি দেশের অন্যতম লাভজনক জুট মিল ছিল। কিন্তু বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে মিলটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বিজেএমসি টাকা না দেয়ায় মিল কর্তৃপক্ষ ১১ সপ্তাহ যাবত শ্রমিকদের মজুরি ও তিন মাস ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি দিতে পারছেন না।

সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান জানান, দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে গিয়ে আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই মিল বন্ধ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমরা বিজেএমসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ বিজেএমসি বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ জুটমিলের মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম রব্বানীর সাথে কথা বললে তিনি মিলের উৎপাদন বন্ধের কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে বিজেএমসির সাথে কথা বলে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করছি।

কেএসটি