• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০১৯, ০৯:৫৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৯, ২০১৯, ০৯:৫৭ এএম

সড়ক দুর্ঘটনায় হাত বিচ্ছিন্ন তরুণ আইসিইউতে

সড়ক দুর্ঘটনায় হাত বিচ্ছিন্ন তরুণ আইসিইউতে

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাত হারানো কলেজছাত্র ফিরোজ সরকারের (২৫) অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে।
 
বেপরোয়া গতির একটি বাসের সঙ্গে আরেক বাসের ধাক্কায় ফিরোজের ডান কনুইয়ের ওপর থেকে হাত কাটা পড়েছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার সামনে শুক্রবার সন্ধ্যায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। সড়কে পড়ে থাকা বিচ্ছিন্ন হাতটি উদ্ধার করে পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে নিলেও কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাতটি আর জোড়া দেওয়া সম্ভব নয়।

রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ফিরোজ সরকার।

রাজধানী ঢাকাতে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা এখনো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের অর্থ এখনো পায়নি রাজীবের পরিবার। এরই মধ্যে একই ধরনের ঘটনা ঘটল এবার রাজশাহীতে।

গত ২২ জুন থেকে ফিরোজ সরকারের স্নাতকোত্তর শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার মাহফুজার রহমানের ছেলে।

সূত্রে জানা যায়, স্নাতকোত্তর শ্রেণির পরীক্ষার ফাঁকে ফিরোজ বগুড়ায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। পরীক্ষার পর শুক্রবার নন্দীগ্রামে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে আবারো তিনি রাজশাহীর উদ্দেশে বাসে রওনা হন। পথে পবা উপজেলার কাটাখালীতে দুটি যানবাহনের ধাক্কায় তার হাত কাটা পড়ে। সড়কে কাটা হাত পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন কাটাখালী থানার পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত হাতটি উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ততক্ষণে ফিরোজকেও ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে বিচ্ছিন্ন হাতটি আর জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। রাতে অস্ত্রোপচারের পর তাকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপর তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

বাসে ফিরোজের সহপাঠী বীরেশ্বর চন্দ্র প্রামাণিকবলেন, তার বাড়িও বগুড়ায়। তিনিও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি বগুড়া থেকে রাজশাহীগামী বাসে উঠেছেন। নন্দীগ্রামে ফিরোজ একই বাসে ওঠেন। কিন্তু ফিরোজ সিট না পাওয়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে পিছের দিকে সিট পান ফিরোজ। তাই বাসের মধ্যে তার সঙ্গে আর কথা হয়নি। রাজশাহীর কাটাখালী পৌর এলাকায় এসে বাসটি খুবই বেপরোয়া চলছিল। হঠাৎ একটা গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। বিকট শব্দে সবাই চমকে ওঠেন। এর পরপরই সবাই চিৎকার শুরু করেন, হাত পড়ে গেছে। কিন্তু কার হাত, তা তিনি তখন বুঝতে পারেননি। বাসটি রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী থামলে দেখেন তার বন্ধু ফিরোজকেই নামানো হচ্ছে। তার ডান হাত বাহু থেকে পড়ে গেছে। সেখান থেকে তাকে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরে তাকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এনে ভর্তি করা হয়। এ সময় অস্ত্রোপচারের জন্য ফিরোজকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টার পর তার অস্ত্রোপচার শেষ হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফিরোজকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে কাটাখালী পৌরসভার সামনে রাজশাহী-নাটোর সড়কে একটা হাত কেটে পড়ে থাকার খবর পান। পরে থানা থেকে ফোর্স পাঠানো হয়। উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম, শাহীন ও কনস্টেবল হাফিজ ও মিজান ফিরোজের বিচ্ছিন্ন হওয়া হাত রাস্তা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারা হাত নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই ফিরোজকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক তাদের জানান, হাতটি জোড়া দেওয়া সম্ভব হবে না।

ফিরোজ আহমেদের শারীরিক পরিস্থিতি এখনও সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন মেডিকেল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম।

কেএসটি