• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৯:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৯:৫৮ পিএম

প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর ভয়াবহতা

রাজধানীর ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত সংকট

রাজধানীর ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত সংকট

রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুরোগ তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ায় রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে ব্লাডব্যাংকগুলোতে। পাশাপাশি রক্তের চাহিদাও বেড়েছে। বিশেষ করে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট প্রকট। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীর স্বজনরা নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, কেউ ছুটছেন ব্লাড ব্যাংকগুলোতে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রক্ত যোগাড় করছেন। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ চাহিদা তৈরি হয়েছে রক্তের। বিশেষ করে নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের রক্ত রীতিমতো দুস্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে রাজারবাগ ব্লাড ব্যাংক, কোয়ান্টাম, রেডক্রিসেন্ট, সন্ধানীসহ রক্ত সংগ্রহ ও সরবরাহকারী প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই। তারা বলছেন, নিয়মিত রক্তদাতার বাইরেও অনেকে রক্ত দিতে এগিয়ে আসছেন, তবে তাদের সংখ্যাও যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের স্বল্পতা এমনিতেই থাকে, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে একজন রোগীর এক ব্যাগ প্লাটিলেটের জন্য চার ব্যাগ রক্ত ব্যবস্থা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর আত্মীয় আতাউর রহমান জানান। আমার রোগীর ব্লাড গ্রুপ নেগেটিভ। রক্ত খুঁজে পাচ্ছি না। একাধিক ব্লাড ব্যাংক ঘুরেও রক্তের ব্যবস্থা হয়নি। এখন যাচ্ছি টিএসসিতে। সেখানে বাঁধন নামে একটি মানবিক সংগঠন রয়েছে। এছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। অপরদিকে ডেঙ্গুর বিস্তারের কারণে ব্লাড ব্যাংকগুলোর ফোন সবসময় ব্যস্ত পাওয়া যায়। কিছু কিছু নম্বর বন্ধ। নিজেদের ডোনার ছাড়া রক্ত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরের একপর্যায়ে কোনো কোনো রোগীর রক্তে প্লাটিলেট দ্রুত কমতে থাকে। এই প্লাটিলেট একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে নেমে গেলে তখন রোগীকে প্লাটিলেট দিতে হয়। প্রতি চার ব্যাগ রক্ত থেকে পাওয়া যায় এক ব্যাগ প্লাটিলেট। ফলে একজন রোগীকে যখন এক ব্যাগ প্লাটিলেট দিতে হচ্ছে, তখন তার জন্য প্রতিবার চার ব্যাগ করে রক্ত প্রয়োজন পড়ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কবির আহমেদ খান বলেন, সারা বছরই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারজনিত কারণে রক্তের চাহিদা থাকে। তবে ডেঙ্গু তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ায় এখন রক্তের চাহিদা তীব্র হয়ে উঠেছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীর স্বজনরা রক্তের জন্য মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, কেউ ছুটছেন ব্লাড ব্যাংকগুলোতে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রক্ত যোগাড় করছেন।

এদিকে রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের কর্মী শরিফুল ইসলাম জানান, তাদের কাছেও রক্তের চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে গত একমাসে প্লাটিলেটের চাহিদা মাত্রা ছাড়িয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের হিসাবে, সাধারণ সময়ে মাসে দুইশ থেকে তিনশ ব্যাগ প্লাটিলেটের চাহিদা থাকলেও জুলাই মাসে প্রায় ১৩শ ব্যাগ প্লাটিলেট সরবরাহ করা হয়েছে।

শান্তিনগরের স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম ও কোয়ান্টাম ল্যাবের প্রো-অর্গানাইজার নাদিম আহসান বলেন, সাধারণ সময়ের তুলনায় এখন রক্তের চাহিদা পাঁচ-ছয় গুণ বেড়ে গেছে। রক্ত দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির তুলনায় রক্ত চান এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন দুইশ থেকে দুইশ ২০ জন রক্তদাতা পাওয়া যায়। এর বিপরীতে আমাদের ল্যাব থেকে রক্ত সরবরাহ করা হয় প্রায় সাড়ে ৩শ ব্যাগ রক্ত। কিন্তু এখন প্রতিদিন পাঁচ থেকে ৬শ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। ফলে আমরা সবার চাহিদামতো রক্ত দিতে পারছি না। আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আমাদের ৩০ জনের মতো কর্মী প্রতিদিন দুইটি শিফটে কাজ করছেন। তবু চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আগারগাঁওয়ের নিউরোসার্জারি হাসাপাতালের চিকিৎসক রাজীব ফকির বলেন, এ পরিস্থিতিতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাইকে রক্ত দিতে এগিয়ে আসা উচিৎ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্লাটিলেট আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়, তখনই কেবল রক্ত দিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেককেই প্লাটিলেট দিতে হচ্ছে। যে কারণে এই সময়ে রক্তের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ সবার সবার রক্তদানে এগিয়ে আসা উচিত।

এইচ এম/এসজেড

আরও পড়ুন