• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২১, ১০:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৪, ২০২১, ১১:১৪ এএম

বর্ণময় কর্মজীবনে এইচ টি ইমাম

বর্ণময় কর্মজীবনে এইচ টি ইমাম

দীর্ঘ সময় মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবশেষে হার মেনে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকার সিএমএইচ-এর  চিকিতসকরা। তার মৃত্যুতে গভীর শোকে পরিবারসহ শুভাকাঙক্ষীরা। কর্মজীবনে তার অবদানের কথা স্মরণ করে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামী লীগের নেতারাও।

নাম হোসেন তৌফিক ইমাম ওরফে এইচ টি ইমাম। জন্ম হয় ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। শৈশব-কৈশোর কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন কলেজে কেটেছে তার  শিক্ষাজীবন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। বিএ ডিগ্রি নেন রাজশাহী কলেজ থেকে। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেন। শিক্ষার পাশাপাশি বাম ছাত্র সংগঠনেও ছিল তার পদচারণা।

শিক্ষকতায়ও তার অবদান ছিল। এইচ টি ইমাম রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক ছিলেন। এরপর পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ওই সময় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে।

১৯৫২ সাল থেকে পূর্বপাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন এবং প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪  শিক্ষাবর্ষে পাবনা কলেজ ছাত্র-সংসদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক, ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী সরকারি কলেজ ছাত্র-সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৬ থেকে ১৯৫৭ সালে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) কমনরুম সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সালে তিনি ছিলেন রাজশাহী জেলার অ্যাসিস্সটেন্ট কমিশনার।১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ সালে নওগাঁর এসডিও, ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জের এসডিও, ১৯৬৫ সালে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা-প্রশাসক এবং ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিনের একান্ত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের অর্থবিভাগের উপসচিব পদে দায়িত্বে ছিলেন এইচ টি ইমাম।

এর মাঝেই ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস-এ অধ্যায়ন করেন এইচ টি ইমাম।

কর্মজীবনে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সড়ক ও সড়ক পরিবহণ বিভাগের সচিব, প্ল্যানিং ডিভিশনের সচিব, প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য, পিএটিসি-র প্রকল্প পরিচালক এবং যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী পরিচালক পদের দায়িত্ব পান।

১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এইচ টি ইমাম। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন তিনি। ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এ দায়িত্বে অবদান রাখেন।

১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব নেন। যোগাযোগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। এরপরই  কর্মজীবনের অবসর নেন এইচ টি ইমাম। সক্রিয় হন রাজনীতিতে।

আওয়ামী লীগে নির্বাচন পরিচালনার কমিটির কো-চেয়ারম্যান হোন এইচ টি ইমাম। যে কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে গুরু দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান গুণী এ নেতা।

৮২ বছর বয়সী এই নেতা নিজ কাজে অবদানের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা তার রচিত কয়েকটি গ্রন্থও রয়েছে।

দীর্ঘদিন কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগলেও কর্মক্ষেত্র থেকে নিজেকে আলাদা রাখেন নি। অসুস্থতাকে পাশে রেখেই নিজ দায়িত্বের অবদান রেখে আলোক বার্তা ছড়িয়েছেন দেশের উন্নয়নে। তার এই চলে যাওয়ার ক্ষতি অপূরণীয়।