• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯, ০৬:৪৮ পিএম

জগন্নাথ হলে ভক্তি ও শ্রদ্ধার নৈবেদ্যে সিক্ত বিদ্যার দেবী

জগন্নাথ হলে ভক্তি ও শ্রদ্ধার নৈবেদ্যে সিক্ত বিদ্যার দেবী


 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে। পূজা উপলক্ষে সমগ্র ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে, বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। পুজা উপলক্ষে রোববার দিনজুড়ে দেশের সবচেয়ে বড় পূজা মণ্ডপ খ্যাত ঢাবির জগন্নাথ হলসহ পুরো ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি উদযাপন করেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। এতে হাজারো ভক্তের ভক্তি ও শ্রদ্ধার নৈবেদ্যে সিক্ত হন বিদ্যার দেবী।

শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী সরস্বতী জগতে আসেন। এদিন শিশিরস্নাত ঊষালগ্নে দেবী তার অগণিত ভক্তের মাঝে শুভাগমন করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী তিনি। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন অগণিত ভক্ত।

পূজা উগলক্ষে জগন্নাথ হলের মাঠে এবছর ৬৭টি পূজা মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, কেন্দ্রীয় পুজামণ্ডপ ও কর্মচারীদের পুজামণ্ডপসহ মোট ৭০টি মণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও একসঙ্গে এতগুলো পূজা মণ্ডপ বসে না। জগন্নাথ হল ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হলসহ অন্যান্য ছাত্রীহলেও পৃথকভাবে পূজামন্ডপ স্থাপন করা হয়েছে।

জগন্নাথ হল মাঠে সকালের দিকে শুরু হয় বাণী অর্চনা। যাতে পুরোহিতদের সঙ্গে ভক্তরা দেবী সরস্বতীর প্রণাম স্তুতি ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ পাঠ করে দেবীর আর্শীবাদ কামনা করেন।

সকাল থেকেই পূজা উপলক্ষে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই বিশেষ করে জগন্নাথ হলে বিরাজ করে উৎসব মুখর পরিবেশ। অগণিত মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে জগন্নাথ হল মাঠ। সকালে বাণী অর্চনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর পুষ্পাঞ্জলী এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়। দিনব্যাপী নানা কমসূচি ছাড়াও সন্ধ্যায় আরতি এবং সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটেই প্রতিমা স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগ।

উৎসবের আয়োজনের বিষয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে এ উৎসব। এখানে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উপস্থিতি উৎসবমুখর পরিবেশে সরস্বতী পূজা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলে মিলে একটি পরিবার। এটাই আমাদের শক্তি।

পূজাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর উদযাপন সরস্বতী পূজা করা হয়। এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যেরই একটি অংশ। বিগত দিনগুলোর অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। সহকারি প্রক্টরগণ এবং প্রক্টরিয়াল টিম ক্যাম্পাসের সকল স্থানে মুভ করছে। এছাড়াও, ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা কাজ করছেন।

সকালে জগন্নাথ হলে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমণি। এসময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সদস্য অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সরকার প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ হলে স্থাপিত বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

উৎসবকে কেন্দ্র করে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা, আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মাইর/এসজেড