• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২০, ১১:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১১, ২০২০, ১১:৩০ পিএম

উন্মুক্ত হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি !

উন্মুক্ত হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি !

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী (সর্বশেষ বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিট; ১১ এপ্রিল, ২০২০) বিশ্বে কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ৫৬৫ এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ২৫৭। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৬১৫ এবং মৃত্যু বরণ করেছে ১৮ হাজার ৭৭৭ জন। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই দেশটিতে বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রদেশ আক্রান্তদের তালিকায় উপরে উঠে আসছে। যদিও আক্রান্তের তালিকার শীর্ষে এখনও নিউ ইয়র্ক। সাথে সাথে দেশটিতে দেখা দিয়েছে মেডিকেল স্টাফ ও ইকুইপমেন্টের স্বল্পতা। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের অর্থনীতি খুলে দেয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন দেশের বাজার খুলে দিতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করতে যাচ্ছেন তিনি। তিনি এমনও বলেছেন যে দেশ খোলার পর যদি ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যায় তবে তিনি আবার বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু মুশকিল হল তার কোনও উপদেষ্টা বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কেউই তার এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন না। জাতীয় এলার্জি ও সংক্রামক রোগ ইন্সটিটিইউটের পরিচালক ডা. এন্থনি ফাউসি বলেছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনওভাবেই দেশটা উন্মুক্ত করা বা এমন কিছু করা যাবে না যাতে সামাজিক দূরত্ব বিঘ্নিত হয়। ডা. ফাউসি এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৬ জন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন।

কেন এমন ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যিনি নিজেই বলছেন এটা হবে তার সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত? সিএনএন বলছে দেশের বড় বড় কোম্পানির সিইও এবং ওয়াল স্ট্রিট সংশ্লিষ্টদের চাপেই তিনি বাধ্য হচ্ছেন এমনটি করতে। সাংবাদিকরা এই প্রশ্নটি উত্থাপন করলে তিনি আঙুল দিয়ে নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বলেন তিনি তার নিজের মেট্রিক্সকে অনুসরণ করছেন। তিনি এও বলেন যে ৩০ জন মানুষের সাথে কথা বলে তিনি নিজস্ব মেট্রিক্স ব্যবহার করে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। সম্ভবত, ‘মেট্রিক্স’ বলতে ট্রাম্প বুঝিয়েছেন, দেশের বর্তমান সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি বিবেচনা করে নিজের বিচার-বিবেচনা ও হিসাব নিকাশ কষে কোনও বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা। দা ডালাস মর্নিং নিউজ ধারণা করছে, কোভিড-১৯ এ যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হবে আনুমানিক ৯৭৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং বছরে প্রায় ১১ দশমিক ৪ মানুষ মিলিয়ন চাকরি হারাবে। এদিকে প্রেসিডেন্টের সাথে তাল মিলিয়ে হিসাব-নিকাশ কষছে অন্যরাও। কোভিড-১৯ এর বর্তমান ধারা বিবেচনা করে নিউ ইয়র্ক টাইমস যে মডেল তৈরি করেছে তা ভবিষদ্বাণী করছে যে সংক্রমণের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং দেশকে যদি এক মাসের মধ্যে খুলে দেয়া হয় তবে আগস্ট মাস নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ হাজার ৫০০ মানুষ মারা যেতে পারে।

এদিকে এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মিডিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য জরিপ করে আসছে। এপ্রিল মাসেই মোট ২২ টি জরিপ হয়েছে যার ১৬ টিতে বাইডেন, ৩ টি তে স্যান্ডারস এবং মাত্র ২ টিতে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ ১০ এপ্রিলে ফক্স নিউজের করা জরিপে ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের সাথে টাই করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রধান কারণ নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তার দৃঢ় অবস্থান ও গৃহীত পদক্ষেপসমূহ। ট্রাম্প কি নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন? কিন্তু যদি তার এই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয় তবে তাকে যে এর জন্য বড় মাশুল গুণতে হবে তাতে কি কোনও সন্দেহ আছে? অন্যদিকে, চীন ধীরে ধীরে দেশকে খুলে দিচ্ছে। মাত্র কিছুদিন আগে তারা কোডিভ- ১৯ এর উৎপত্তিস্থল উহানকে ৭৮ দিন লকডাউনের পর উন্মুক্ত করেছে। তবে কি বিশ্ব বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ার ভয় পাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? ২০১৯ এ চীনের সাথে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩৪৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার। একই বছর যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করেছিল ৪৫২ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের পণ্য কিন্তু দেশটিতে রফতানি করেছিল মাত্র ১০৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউএস ডলারের পণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের যে বৈদেশিক ঋণ আছে তার ১৬ শতাংশ শুধু চীনের কাছে।

একদিকে দেশকে উন্মুক্ত করার জন্য অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের চাপ, অন্যদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞদের বাধা আর সব কিছু ছাপিয়ে প্রেসিডেন্টের নিজস্ব ‘মেট্রিক্স’। কী করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? দেখা যাক।

লেখক ● শিক্ষক, কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন