• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০১৯, ০৯:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৪, ২০১৯, ০৯:৫৯ পিএম

অলির জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ!

অলির জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ!
২৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম - ফাইল ছবি

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দ্রুত দেশে পুনরায় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম সিনিয়র নেতা এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে আলাদা প্লাটফর্ম সৃষ্টি করেছেন। বিএনপিরই সাবেক সিনিয়র নেতা কর্নেল অলি আহমদের হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরিকে সন্দেহের চোখে দেখছে খোদ বিএনপি।

গত ২৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে কর্নেল অলির এ নতুন প্লাটফর্মের জন্ম হয়। জাতীয় মুক্তি মঞ্চের জন্ম ঘোষণাকালে মঞ্চে অলি আহমদের পাশে ছিলেন ২০ দলেরই আরেক নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। পাশে ছিলেন প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের কন্যা জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। পাশে ছিলেন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আহমেদ উল্লাহ ও জাতীয় আন্দোলনের সভাপতি মুহিব খানসহ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যান্য নেতা।

নতুন এই রাজনৈতিক মঞ্চের ঘোষণা দেয়ার সময় কর্নেল অলি বলেন, দেশপ্রেমিক যে কেউ এ মঞ্চে আসতে পারবেন। সরকারের উদ্দেশ্যে আমরা ১৮টি দাবি তুলে ধরেছি। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং নতুন করে জাতীয় নির্বাচনের দাবি রয়েছে শুরুতে। 

নতুন মঞ্চে জামায়াত প্রশ্নে কর্নেল অলি বলেন, এখানে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের যারা দেশ এবং সমাজের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চান তারা সবাই থাকতে পারবেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়। এরা বাংলাদেশের। এই দেশকে তারা ভালবাসে। তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী আসছে। তারা নিজেদের মধ্যে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা দেশপ্রেমিক শক্তি। 

জাতীয় মুক্তি মঞ্চের জন্ম ঘোষণার পর এই ব্যানারে কর্নেল অলি আহমদ তার নিজের অঞ্চল চট্টগ্রামে প্রথম বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করেন। গত ১ জুলাই সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ কর্মসূচিতেও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ দলের অন্য নেতারা যোগ দেন। চট্টগ্রামের পর আগামী ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সিলেটে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

বিএনপি ও এলডিপি সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ের বিএনপির অন্যতম সিনিয়র নেতা কর্নেল অলি আহমদের জাতীয় মুক্তি মঞ্চ সৃষ্টিকে বিএনপি সন্দেহের চোখে দেখছে। অলি তার জাতীয় মুক্তি মঞ্চ জন্মের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে পাশের দেশ ভারত সফর করে আসেন। এরপর দেশে ফিরেই তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত গণচীনের রাষ্ট্রদূতকে তার মহাখালীর ডিওএসএইচের বাসায় নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে ২০ দলীয় জোটের আরও কয়েকজন নেতা ছিলেন। এরপর তিনি কার্যত ‘আটঘাট’ বেঁধেই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের ঘোষণা দেন এবং কর্মকাণ্ড শুরু করেন। 

এলডিপি সূত্রে জানা যায়, কর্নেল অলি বুধবার (৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টায় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক সফরে গিয়েছেন। তিনি ১৪ জুলাই দেশে ফিরবেন। এরপর সিলেটে জাতীয় মুক্তি মঞ্চের ব্যানারে বড় কর্মর্সূচি পালন করবেন। তার এ ব্যাংকক সফর ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বলে জানা যায়।

এর আগে জাতীয় মুক্তি মঞ্চের ঘোষণা উপলক্ষে এলডিপির পক্ষ থেকে বিএনপির বেশ কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েও শেষ মুহূর্তে ঘোষণা মঞ্চে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি দল উপস্থিত হননি। যদিও পরদিন শেরেবাংলা নগরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অলির জাতীয় মুক্তি মঞ্চ সৃষ্টিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের আলাদা কর্মসূচি পালন ও কর্মসূচি গ্রহণের স্বাধীনতা আছে। আমরা উনার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

তবে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, অলির উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও পুরো বিষয়টিকে সন্দেহের বাইরে দেখছে না বিএনপি। অলির কর্মকাণ্ড খুব গভীরভাবে মনিটরিং করছে দলটি ও দলের সিনিয়র নেতারা। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন, হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রশ্নে অলির এ তৎপরতাই বা কেন? বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। এ নিয়ে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করছেন। 

কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ ও এর কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির গুঞ্জন শুনেছেন বলে দৈনিক জাগরণের কাছে স্বীকার করেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। দৈনিক জাগরণকে বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি বলেন, আমরা অনেকের কাছে শুনি যে বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের কর্মসূচিতে যেতে অনেককে বারণ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে আমরা কোনো প্রমাণ চাইওনি, প্রমাণ করার চেষ্টাও করিনি। প্রমাণ করতেও চাই না। আমি/আমরা মনে করি এই মুহূর্তে বিএনপির এ ধরনের ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।

এদিকে, জাতীয় মুক্তি মঞ্চের চট্টগ্রাম কর্মসূচিতে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন ২০ দলীয় জোট নেতা দৈনিক জাগরণকে জানিয়েছেন তারা আগামীতে অলির কর্মসূচিতে যাবেন কি না ভেবে দেখছেন।  

চট্টগ্রামে কর্নেল অলির কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ২০ দলীয় জোটের শরিক এক দলের চেয়ারম্যান দৈনিক জাগরণকে বলেন, চট্টগ্রামের কর্মসূচিতে আমি গিয়েছিলাম বিএনপির গ্রিন সিগনাল পেয়েই। কিন্তু সামনে ১৬ জুলাই সিলেটের কর্মসূচিতে আমি আর যাব না। কারণ বিএনপি থেকে আমাকে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম নিবন্ধনভুক্ত রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের এক শীর্ষ নেতা দৈনিক জাগরণকে নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, জাতীয় মুক্তি মঞ্চের ঘোষণা ও চট্টগ্রামের কর্মসূচিতে আমরা উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু আগামীতে ওই ব্যানারে কোনো কর্মসূচিতে আমরা অংশ নেব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মনে করি, বর্তমান অগণতান্ত্রিক ও ভোটবিহীন অনৈতিক সরকারকে হটাতে হলে তা বিএনপির নেতৃত্বেই হতে হবে। বিএনপির বিকল্প কোনো রাজনৈতিক শক্তি এখনও এদেশে সৃষ্টি হয়নি। আর কর্নেল অলি আসলে কী করতে চাচ্ছেন, বিষয়টি এখনও তিনি খোলাসা করতে পারেননি বলে আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্যের জাতীয় সংসদে যোগদান ও জামায়াত প্রশ্নে আমরা বিএনপির কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছি। এখনও আমাদের ব্যাখ্যার সদুত্তর পাইনি। সেজন্য ব্যাখ্য না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ২০ দলীয় জোটের কোনো বৈঠকে অংশও নেব না। কিন্তু আমরা ২০ দল থেকে বেরিয়েও যাব না।

জাতীয় মুক্তি মঞ্চকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে কোনো সন্দেহ তৈরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে দলটির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক মোহাম্মদ শাহজাহান দৈনিক জাগরণকে বলেন, উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয় তাহলে সন্দেহের কোনো বিষয় দেখা দেয় না। প্রবাদ আছে না, বিড়াল ধলা কি কালা সেটা ধর্তব্যের বিষয় না। বিষয়টি হল- বিড়ালটা আসলে ইঁদুর মারতে পারে কি না? তাই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের নেপথ্যে জামায়াত না অন্য কেউ আছে তা আমাদের (বিএনপি) ধর্তব্যের বিষয় নয়। যেকোনো প্রকারেই বেগম জিয়ার মুক্তি হলেই আমরা তা সমর্থন করবো। 
 
টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন