• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯, ১০:০২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯, ১০:০২ এএম

‘খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ সুস্থ, যে কোনো সময় কারাগারে স্থানান্তর’ 

‘খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ সুস্থ, যে কোনো সময় কারাগারে স্থানান্তর’ 
হাসপাতালে খালেদা জিয়া- ফাইল ছবি

দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে কোনো সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে কারাগারে স্থানান্তর করা হবে।এখন শুধু প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য অপেক্ষা। এমনটাই বলছেন কারা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা দৈনিক জাগরণকে বলেন, বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে বলেছেন, চিকিৎসাধীন কারাবন্দি খালেদা জিয়া সুস্থ। তার আগেকার সকল উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা ও খাবার খেতে পারছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার জটিল কোনো বিষয় নেই। তাকে যে কোনো সময় বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে ছাড় পত্র দিতে পারে।
  
হাসপাতাল সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া পুরোপুরি সুস্থ রয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, খালেদা জিয়া যেসব শারীরিক সমস্যা নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলেন তার সবগুলোই এখন উন্নতির দিকে। তার আর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমরাও তাকে ডিসচার্জ করছি না। তার নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই হাসপাতালে থাকা, না থাকা নির্ভর করছে।

অপরদিকে কারাবন্দি চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. জিলন মিয়া সরকার বলেন, গত বৃহস্পতিবারও আমরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। তার ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। দাঁতের ট্রিটমেন্ট করা পর মুখের আলসারটাও নেই। আথ্রাইটিসের ব্যাথাও নেই বললে চলে। 

জিলন সরকার বলেন, যত দিন আমি তাকে দেখতে গিয়েছি, সব সময় তিনি হাসিমুখে কথা বলেছেন। কখনো মনে হয়নি তিনি বিরক্ত। তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এবিষয়ে কারা অধিদফতরের ডিআইজি (ঢাকা বিভাগ ) টিপু সুলতান দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা সর্বদা বন্দির মানবিক দিকটা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। বিশেষ করে অসুস্থ বন্দির চিকিৎসার ক্ষেত্রে জেলকোড অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা ও খাবার ও বিশ্রামের বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। সে হিসেবে কারাবন্দি খালেদা জিয়াতো ভিআইপি বন্দি। তার বিষয়টাতো আরো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি তাকে ছাড়পত্র দেন। তা হলে আমরা তাকে প্রথমশ্রেনীর বন্দির মর্যাদা দিয়ে রাখার চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান টিপু সুলতান।
   
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন। পরে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের আর্থিক দায়িত্ববান বা জিম্মাদার হয়ে বা তহবিল পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে পরস্পর যোগসাজশে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা  আত্মসাৎ করেছেন, যা দন্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারার অপরাধ। 

এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ১২ দশমিক ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার আসে যা বাংলাদেশি টাকায় তৎকালীন ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা।
 
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় না দিয়ে অস্তিত্বহীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। অথচ কোনো নীতিমালা তিনি তৈরি করেননি, করেননি কোনো জবাবদিহিতার ব্যবস্থাও। অথচ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা অস্তিত্বহীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে পাঠান। পরে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন যার জন্য তিনি দায়ী হন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থেকে নিজের পদমর্যাদা বলে সরকারি এতিম তহবিলের আর্থিক দায়িত্ববান বা জিম্মাদার হয়ে বা তহবিল পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দন্ডবিধির ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার অপরাধ করেছেন।

এ মামলায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদক-এর উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।

এই মামলায় খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
 
এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন