• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ০২:৪৮ পিএম

ঐতিহ্য ধরে কুলাউড়ায় চলছে বলদ দিয়ে আখ মাড়াই!

ঐতিহ্য ধরে কুলাউড়ায় চলছে বলদ দিয়ে আখ মাড়াই!
কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে পুরোনো পদ্ধতিতে মহিষ দিয়ে আখ মাড়াচ্ছেন চাষিরা, ছবি: জাগরণ

 

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিশ্বায়নের এই যুগে কত কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের জীবন যাত্রার মান যেমন উন্নত হয়েছে তেমনি উন্নত হয়েছে মানুষের চিন্তা ধারণা। এক সময় গ্রামের বাড়িতে শীতের পিঠা-পুলি তৈরি করতে ঢেঁকিতে চাল গুড়ো করতেন মা-বোনেরা। ঠিক তেমনি আখ যাঁতাকলে মাড়িয়ে রস বের করে রসালো সুস্বাদু ভিন্ন স্বাদের পিঠাসহ নানা রকম খাদ্য উপকরণ তৈরি করা হতো।

বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন অত্যাধুনিক মেশিনের আবির্ভাব হওয়ায় এসব দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু গ্রামে এই আধুনিকায়নের ছোঁয়া এখনো লাগেনি। এখনো অনেক গ্রামের আখ চাষিরা পুরনো পদ্ধতিতে বলদ দিয়ে আখ মাড়াই করে নানা রকম খাদ্য উপকরণ তৈরি করছেন।

ঐতিহ্যবাহী এ রকম দৃশ্য দেখা গেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর পাড়ের বিভিন্ন গ্রামে। সেখানকার আখ চাষিদের কর্মে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগেনি এখনো। তারা আঁকড়ে ধরে আছে বাপ-দাদার সেই পুরনো ঐতিহ্য। তবে এখনো ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছে এ পদ্ধতিতে আখ মাড়াই থেকে সংগৃহীত রস এবং গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি। তবে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আখ চাষিদের নিয়ে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সংস্থাই সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না। তাদের আক্ষেপ, কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা আমাদের নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার মনু নদী তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের রনচাপ, চকরনচাপ ও গাজীপুর, টিলাগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয়গ্রাম, সন্দ্রাবাজ গ্রামে বিশাল এলাকা জুড়ে হচ্ছে আখ চাষ। মনু নদীর বেড়ি বাঁধের ভেতর অংশে প্রচুর আখের চাষাবাদ হয়েছে। কোন কোন বাড়ির সামনে আখ মাড়াই কল বসানা আছে। কেউ কেউ আখ কেটে সেগুলোকে মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন।

এদিকে একটি বাড়িতে আখ মাড়াই দেখা যায়। হালের একটি বলদ (মহিষ)-কে কলের একটি অংশে বেঁধে গোলচত্বরের মতো নির্দিষ্ট এলাকা ঘুরতে দেখা যায়।  আখ চাষিরা আখ যাঁতাকলে দিচ্ছেন। কল এর একটি অংশ থেকে রস বের হচ্ছে। সে রস একটি পাত্রে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আখ চাষিরা বলেন, এই রস পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে গুড় তৈরি করা হবে।

স্থানীয় আখ চাষিরা জানান, তারা এসব আখ চাষে খুব একটা পরিচর্যা করেন না। মনুর চরে বর্ষাকালে যে পলি আটকে সেই পলিতেই নতুন করে গজায় আখ গাছ। গাছের পাতাগুলো শুধু ছাটাই করে দেন তারা। আর শীতকাল এলেই সেই পুরনো কায়দায় বলদ (মহিষ) আর মাড়াই কল দিয়ে রস বের করে আগুনে জাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়।

তবে সনাতন কায়দা হলেও এই পদ্ধতিতে তৈরিকৃত গুড়ের কদর মানুষের কাছে আকাশচুম্বী। প্রতি ৮টিন রস জাল দিলে একটিন গুড় হয়। সেই একটিন গুড়ের দাম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। চাহিদা প্রচুর থাকলেও আখ চাষিরা বিক্রেতাদের চাহিদামত গুড় সরবরাহ করতে পারেন না। বিশেষ করে শীতকালে এ গুড়ের চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়।

হাজীপুর ইউনিয়নের চকরনচাপ গ্রামের জব্বার মিয়া, বাবুল মিয়া, আব্দুল কাইয়ুম, টিলাগাঁও ইউনিয়নের সন্দ্রাবাজ গ্রামের সুমন মিয়া, ফুয়াদ মিয়া জানান, প্রতিদিন এ পদ্ধতিতে আখ মাড়াই করতে তাদের খরচ মহিষ ভাড়া চারশ এবং মাড়াইকল ভাড়া একশত টাকাসহ মোট পাঁচশ টাকা খরচ আছে। এক মৌসুমে খরচ বাদে তারা মাথাপিছু প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন।

চাষিরা আরও জানান, পটক, কালামানিক, লোহারটং নামক স্থানীয় জাতের আখ চাষ করে থাকেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ কিংবা কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কোন কর্মী তাদের কোনরকম পরামর্শ দেন না।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার জানান, আখ চাষিদের বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। তবে আখ চাষে কিভাবে কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করা যায়, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে তার দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

টিএফ