• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯, ০৭:৪৮ পিএম

‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও কার্যকর লড়াই করতে হবে’

‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও কার্যকর লড়াই করতে হবে’
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ছবি- জাগরণ

 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, সরকার বলছে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রোল মডেল। আজ সমাজের কিছু লোক কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন। অন্যদিকে দলিত ও আদিবাসীদের মতো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। সমাজে বৈষম্যের এই চিত্র আরও প্রকট হচ্ছে। সমাজ থেকে এই বৈষম্য দূর করতে এবং অধিকার আদায়ে এখন প্রয়োজন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা। লড়াইটা দৃশ্যমান ও কার্যকর করতে হবে।

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নওগাঁ শহরের প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী দলিত ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন এনএনএমসির নওগাঁ জেলা অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্ম এই সভার আয়োজন করে। বেসকারি উন্নয়ন সংস্থা হেকস-ইপার আর্থিক সহযোগিতায় এনএনএমসি ২০১৩ সাল থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১০টি জেলায় দলিত ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে।

জেলা অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্মের সভাপতি ডিএম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে ও উন্নয়ন সংস্থা হেকস-ইপার বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোজাহেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হেকস-ইপার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনিক আসাদ, বেসরকারি সংস্থা পল্লী সহযোগী বিষয়ক সংস্থার (আরকো) নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী প্রমুখ।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘সংবিধানে সবার সমান অধিকারের কথা বলা আছে। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললেও সমধিকার ও বৈষম্য নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সমাজের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্য বিলোপ আইন হওয়ার কথা ছিল। সেটির খসড়াও ছয়-সাত বছর আগে হয়ে রয়েছে। আমরা দেখছি, কত আইন পাস হচ্ছে কিন্তু সেই আইনটি আর পাস হচ্ছে না। দেশের অধিকাংশ মানুষ চায় না, এমন আইনও হামেশাই পাস হয়ে যাচ্ছে।’  

দেশে একটা তোষামোদের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা খুবই ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। খুবই শক্তিশালী নেত্রী হয়েছে। তারপরেও মানুষের এত কষ্ট কেন? যে জায়গায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সমাজে যারা নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষ রয়েছে তাদের কষ্টের কথা নেত্রীর কানে পৌঁছে না।

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘খালি মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেলাম, উন্নতি করে ফেললাম, রোল মডেল হয়ে গেলাম, সবচেয়ে শক্তিশালী নেতাদের দশজনের একজন হয়ে গেলাম তাহলেই কি সব হয়ে গেলাম। শুধু কি উন্নয়নের মানদণ্ড হয়, আর সভ্যতার মানদণ্ডের কি প্রয়োজন নেই? এত এত উন্নয়নের মধ্যেও দেশের কিছু জনগোষ্ঠীর মানুষ দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে, আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, উন্নয়ন নীতিগুলোতে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। ফলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস বা চলাচল করতে পারছে না। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সমাজের মূলধারা থেকে তারা পিছিয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

বিকেলে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে দলিত ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সুলতানা কামাল।

কেএসটি