• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০১৯, ০৮:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৫:২৭ পিএম

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৫

রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল

রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল
ঘটনাস্থল- কাতুয়াপিতিয়ার সেন্ট সেবাস্টিয়ন গির্জা -ইন্টারনেট

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার রেশ না কাটতেই আবারও মৃত্যুমুখী নৃশংসতার ভয়াল তাণ্ডব নৃত্য দেখলো বিশ্ববাসী। শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। সর্বশেষ তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৫-এ পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৩৫ জন বিদেশি। নিখোঁজ এক শিশুসহ দুই বাংলাদেশি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এরইমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিস্তারিত লিখেছেন এস এম সাব্বির খান

সর্বশেষ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কা-এর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দেশটির এই অপ্রত্যাশিত বোমা বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনার তীব্র নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি এই হামলার মাধ্যমে দেশটির স্বাভাবিক জীবন-যাপন বাধাগ্রস্ত করা ও অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি।

শ্রীলঙ্কয়ার সিরিজ বিস্ফোরণে স্বজনহারাদের আহাজারি  -ইন্টারনেট

দিনের আলোচিত ঘটনাবলী —

রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে শ্রীলঙ্কার ৩টি গির্জা ও ৩টি হোটেলে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রথম বিস্ফোরণটি হয় কাতুয়াপিতিয়ার সেন্ট সেবাস্টিয়ন গির্জায়। এখানেই প্রায় ৫০ জন মারা যান। এরপর কোতাহেনার সেন্ট অ্যান্থনিজ চার্চে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রায় ১৬০ জনের মতো আহত হন। শেষ বিস্ফোরণটি ঘটে বাত্তিকালোয়ার জিওন চার্চে। এখানে আহত হন তিন শতাধিক মানুষ।

এছাড়াও কলম্বোর তিনটি পাঁচতারা হোটেল কিংসবুরি, শাংরিলা এবং সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলেও বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। সবগুলো বিস্ফোরণই ঘটে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট নাগাদ।

সকালের ৬টি সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের পর দেশটিতে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মাঝেই পর পর আরও দুটি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর দুটি এলাকা।

এরপরেই শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জনগণের ওপর আজ যে কাপুরুষোচিত হামলা চালানো হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই দুঃখজনক সময়ে আমি শ্রীলংকার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ ও শক্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। দয়া করে যাচাই-বাছাই না করে কোনও গুজব ছড়াবেন না। সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত চার্চের মেঝেতে হতভাগ্য একজনের মরদেহ -ইন্টারনেট

এদিকে টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এ হামলাকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির জন্য একটি সংগঠিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যয়িত করেছেন শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা।

এই বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক পর্যায় থেকে হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশসহ দ্রুত এর সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের জোর দাবি উঠে।

৭ম বিস্ফোরণ হয় কলম্বোর দেহিওয়ালা চিড়িয়াখানায়। এতে কমপক্ষে দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ ৮ম বিস্ফোরণটি ঘটে কলম্বোর দেমাতো গোদার মহাভিলা রোডের একটি আবাসিক এলাকা। জানা যায়, এ সময় ছোট ছোট তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে এলাকাটিতে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। 

জরুরি অবস্থা জারি
এ ঘটনার পর পর সারা দেশজুড়ে কারফিউ ( জরুরি অবস্থা) জারি করেছে লঙ্কান সরকার। দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারিয়েট থেকে রোববার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউয়ের ঘোষণা আসলেও দেশটির পুলিশ প্রধানের পক্ষ থেকে তা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কান পুলিশের মহাপরিদর্শক পূজীট সুন্দরা।

এদিন স্থানীয় সময়  সন্ধ্যা দেয়া এক বিবৃতিতে লঙ্কান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে জানান, ‘‘এই দেশকে এবং দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে আমরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছি। এরইমধ্যে দুর্ভাগ্যজনক এই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্দেহে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।’’

কলম্বোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। উত্তেজনা ও গুজব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। দুই দিনের জন্য সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’’

দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে সেনা মোতায়ন ও কারফিউ জারি রয়েছে লঙ্কাজুড়ে -ইন্টারনেট 

অপরদিকে সকালের ঘটনার পরপরই দেশটির সকল স্কুল ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করেন।

লঙ্কান সরকারি কর্মকর্তারা জানান, দেশজুড়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তা পাঠানোর অ্যাপস দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে করে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো না যায়।

রোববার (২১ এপ্রিল) খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে রাজধানী কলম্বো ও তার আশেপাশের তিনটি গির্জা, তিনটি হোটেল, চিড়িয়াখানা ও একটি আবাসিক এলাকাসহ মোট আটটি স্থানে এই সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৫০০ ছাড়িয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে ৩৫ বিদেশি রয়েছেন বলে জানা গেছে, যাদের ১১ জন পর্যটক হিসেবে সেখানে অবস্থান করছিলেন। নিখোঁজ রয়েছেন এক শিশুসহ দুই বাংলাদেশি নাগরিক। 

তবে এখনও কোনও গোষ্ঠী বা সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ শ্রীলঙ্কার মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। দেশটির দুই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী তামিল ও সিংহলিজ উভয়ের মধ্যেই এই ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি রয়েছে।

এসকে/এসএমএম